সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের একবার কেঁপে উঠল পাহাড়। দার্জিলিংয়ের সুপার মার্কেটের পর এবার কালিম্পংয়ে বিস্ফোরণ। নিশানায় থানা। কালিম্পং থানা লক্ষ করে ছোড়া হল গ্রেনেড। এছাড়া বিস্ফোরণ হয়েছে কালিম্পং থানা লাগোয়া মেলা গ্রাউন্ডেও। পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিং যাদব জানিয়েছেন, রাকেশ রাউত নামে এক সিভিক পুলিশকর্মী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছেন্দুপ ভুটিয়া নামে এক হোমগার্ড এবং এসএসবি—র এক জওয়ানও। মূলত থানা ও পুলিশ ভ্যান লক্ষ্য করেই হামলাটি হয়েছে। একটি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার বিস্ফোরণের ঘটনায় পাহাড় জুড়ে তল্লাশি কয়েক গুন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের বিস্ফোরণের ঘটনায় মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
মোর্চার ডাকা বনধের ৬৬ দিনে আক্ষরিক অর্থে কেঁপে ওঠে পাহাড়। শুক্রবার রাত বারোটা দশ মিনিট নাগাদ চকবাজারের ওল্ড সুপার মার্কেটের সামনে মোটরস্ট্যান্ডে বিস্ফোরণ হয়। যার নেপথ্যে বড় নাশকতা ও চক্রান্তের ইঙ্গিত পাচ্ছে রাজ্য প্রশাসন । এই ঘটনায় মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং—এর বিরুদ্ধে ইউএপিএ (অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন) মোতাবেক জামিন—অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে সরকার। তাতে অন্যান্য অভিযোগের সঙ্গে রাষ্ট্র বিরোধিতার অভিযোগও যোগ করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন—শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানিয়েছেন, বিমল গুরুং ও তাঁর দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের তদন্তভার নিচ্ছে সিআইডি। ফরেনসিক টিম পাঠানো হয়েছে। তিনজনের বিরুদ্ধে দার্জিলিং সদর থানায় বিস্ফোরক আইন, সরকারি সম্পত্তি নষ্টের চেষ্টা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জামিনঅযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। দার্জিলিংয়ের ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের পাহাড়ে বিস্ফোরণ হয়। শনিবার রাতে কালিম্পং থানার কাছে মেলা গ্রাউন্ডে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় সিভিক পুলিশকর্মীর রাকেশ রাউতের। হামলাকারীদের লক্ষ ছিল কালিম্পং থানা। থানা লক্ষ করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। রবিবার সকাল থেকে কালিম্পংয়ে রাস্তায় নাকা তল্লাশি চালায় পুলিশ।
সূত্রের খবর, গুরুং গত ক’দিন যাবৎ ক্রমাগত ডেরা বদলে চলেছেন। পাহাড় সচল করার পক্ষে স্থানীয় জনমত প্রবল হচ্ছে। দিল্লিও মোর্চাকে বলে দিয়েছে বন্ধ তুলে রাজ্যের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসতে। সাঁড়াশি চাপের মুখে মোর্চা যখন সবেমাত্র ভাঙতে শুরু করেছে, তখন এই বিস্ফোরণ পাহাড়—রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা জুড়েছে। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে চিঠি লিখে গুরুংয়ের পাল্টা নালিশ——— চকবাজারের বিস্ফোরণ সাজানো ঘটনা, এতে মোর্চার কোনও হাত নেই। চটজলদি ইউএপিএ ধারা প্রয়োগের যৌক্তিকতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। মোর্চার সহকারী সম্পাদক জ্যোতি রাইয়ের মতে, বিমল গুরুংকে ফাঁসাতেই এই মামলা৷ কী উদ্দেশ্যে এমন ভয়ানক নাশকতা? কারা জড়িত? স্পষ্ট নয়৷ প্রশাসনের কোনও মহলের মতে, এতে নেপালের মাওবাদী কিংবা অন্য বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে৷ কারও সন্দেহ, এ আদতে মোর্চার অন্তর্দ্বন্দ্বের জের৷ পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে, পাহাড়ের আরও কোথাও এ জাতীয় বিস্ফোরক মজুত রয়েছে কি না। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মাওবাদীরা মূলত তারের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটায়। এক্ষেত্রে কী ব্যবহার হয়েছে? তার, না টাইমার, নাকি রিমোট কন্ট্রোল? খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.