দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সুন্দরবনে কালো বাঘের অস্তিত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে জঙ্গলে যেতে ভয় পাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। বনদপ্তরের তরফ থেকে শুরু হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদৌ কালো বাঘ আছে নাকি নেহাতই গুজব তদন্ত শুরু করেছে বনদপ্তর।
রবিবার সুন্দরবনের ঝিলার দু’নম্বর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে যায় গোসাবার কুমিরমারি দ্বীপের তিনজন মৎস্যজীবী। কাঁকড়া ধরার সময় বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই মৎস্যজীবীদের উপর। ঘটনায় নিহত হন এক মৎস্যজীবী। সঙ্গীকে যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছে অন্য দু’জন বাকরুদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে। তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। পরে ফিরে জানান এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁদের দু’জনের বক্তব্য শুনে সুন্দরবনের আধিকারিকদের কপালে ভাঁজ পড়ার অবস্থা। তাঁরা দু’জনেই জানিয়েছেন বাঘটি কালো রঙের ছিল। বাঘের আকৃতি ছিল বিরাট। এরপর গ্রাম থেকে বহু মানুষ উপস্থিত হন জঙ্গলে। তারা বাঘকে না দেখতে পেলেও বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান। দেখতে পান, এই বাঘের পায়ের ছাপ সাধারণ বাঘের থেকে খানিকটা বড়। ফলে মৎস্যজীবীদের কথার সঙ্গে কিছুটা হলেও মিল পান গ্রামবাসীরা। তবে বাঘের গায়ের রং আদৌ কালো কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এতদিন সুন্দরবনের জঙ্গলে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের যে পরিসংখ্যান করা হয়েছে তাতে কোথাও কালো বাঘের অস্তিত্ব মেলেনি। ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল কালো চিতা বেড়ালের। হঠাৎ করে কালো বাঘের অস্তিত্ব ধোঁয়াশা তৈরি করেছে বনদপ্তরের আধিকারিকদের মধ্যেও। আর যদি সত্যিই বাঘ কালো হয়, তাহলে নতুন একটি প্রজন্মের জন্ম হল সুন্দরবনে। এমনটা আশা করছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। এ বিষয়ে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিক অনিন্দ্য গুহঠাকুরতা বলেন, “সুন্দরবনে কালো বাঘের কথা কখনও শোনা যায়নি। বিষয়টি গুজব বলে মনে হচ্ছে। তবে সেটা যদি বাস্তবে হয়ে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে সুন্দরবন নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা করতে হবে। সুন্দরবনে বহু ক্যামেরা বসানো হয়েছে বাঘ গণনার জন্য। সেখানে এরকম কোনও কালো বাঘের ছবি ধরা পড়েনি। তাই ব্যাপারটা আদৌ সত্যি কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এবিষয়ে ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, “সমস্ত বাঘের পায়ের ছাপ এক নয়। ছোট-বড় হতেই পারে। তাছাড়া কাঁচা মাটিতে পায়ের ছাপ পড়লে সেটা বেশ খানিকটা বড় দেখায়। আর বাঘের শরীরে যদি হলুদের থেকে কালোর সেল বেশি থাকে তাহলে বাঘ খানিকটা কালো হতে পারে। তবে মনে হয় বাঘটি কাদামাখা অবস্থাতেই ছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.