অরূপ বসাক, মালবাজার: ভোরবেলা দরজা খুলতেই চক্ষুচড়কগাছ গৃহস্থের। শীতের সকালে ঘরের মধ্যে আলমারির পাশে গুটিসুটি মেরে বসে কুচকুচে কালো একটি জন্তু। ভেবেছিলেন, শীতের রাতে শূকর আশ্রয় নিয়েছে বোধহয়। তবু ঝুঁকি নেননি গৃহস্থ। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন বনদপ্তরে। কিন্তু কোথায় শূকর, বনদপ্তরের কর্মীরা এসে দেখেন, ঘরের মধ্যে সেঁধিয়েছে আস্ত একটা ভাল্লুক। বন্যপ্রাণীটি পূর্ণবয়স্ক নয়, এটাই যা রক্ষে। তার পর আর কী! নিয়ম মেনে ঘুমপাড়ানি ওষুধ দিয়ে বাচ্চা ভাল্লুকটিকে উদ্ধার করল বনদপ্তর। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতেই নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে তাকে।
এদিন মালবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ভাল্লুকের পায়ের ছাপ ঘিরে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। মনে করা হচ্ছে, জঙ্গল থেকে একাধিক ভাল্লুক বেরিয়ে শহরের আশপাশে ঘাপটি মেরে রয়েছে। তাই শহরজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে বনদপ্তর। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে রাতের অন্ধকারে শিশুদের বাড়ির বাইরে বেরনোর উপরও। কোনও বন্যপ্রাণী দেখতে পেলে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে বনদপ্তরে খবর দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
মালবাজারের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার রোডের বাসিন্দা বিশ্বনাথ পোদ্দার। বুধবার ছিল তাঁর নাতির জন্মদিন। অনেক রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। এদিন সকালে সেই অনুষ্ঠান বাড়িতে আসেন মালিক বিশ্বনাথবাবু। ঘরগুলি ঘুরে দেখছিলেন তিনি। তখনই তাঁর চোখে পড়ে আলমারির পাশে লুকিয়ে থাকা জন্তুটি। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, “বুধবার রাতে আমার নাতির জন্মদিন ছিল। বৃ্হস্পতিবার সকালে যখন ভবনের ঘরগুলো দেখতে আসি তখন ভবনের একটি ঘরে ভাল্লুক দেখি।” ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি বনদপ্তরে খবর দেন। ততক্ষণে বাড়ির বাইরে ভিড় জমে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে আসে মালবাজার এবং মেটেলি পুলিশ। তাঁরাই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন।
ভাল্লুকটিকে উদ্ধার করতে আসে মালবাজার ওয়াইল্ড লাইফ, চালসা রেঞ্জ, ডায়না রেঞ্জ, তারঘেরা রেঞ্জ, লাটাগুড়ি রেঞ্জের বন আধিকারিকেরা। হাজির হয় পরিবেশ সংগঠন স্পোর, মালবাজার মাউন্টেন টেকার্স এবং ন্যাসের সদস্যরাও। প্রথমে মনে করে হয়েছিল, জাল দিয়ে ভাল্লুকটিকে ধরে ফেলা যাবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। রেঞ্জ ওয়ার্ডেন দীপেন সুব্বা বলেন, “ভবনের ভিতরে ভাল্লুক রয়েছে। আমরাও ঊর্ধ্বতন মহলকে খবর দিয়েছি।”
শেষে দুপুর দু’টো নাগাদ জলপাইগুড়ি থেকে আসে বনদপ্তরের ট্র্যাঙ্কুইলাইজার টিম। অবশেষে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ভাল্লুকটিতে কাবু করা হয়। পরে তাকে নেওড়াভ্যালি জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। বনদপ্তর সুত্রে জানা গিয়েছে, ভাল্লুকটির বয়স ৬-৭ মাস হবে। মালবাজার ওয়াইল্ড লাইফের রেঞ্জার দীপেন সুব্বা এবং তারঘেরা রেঞ্জার কুনাল বর্মন জানান, বর্তমানে সুস্থ রয়েছে ভাল্লুকটি।
এদিকে ডামডিম পেট্রল পাম্প এলাকায় ভাল্লুকের পায়ের ছাপের সন্ধান পেয়েছেন বনকর্মীরা। তবে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত হতে নিষেধ করেছেন তাঁরা। এলাকায় বনদপ্তর কর্মীরা টহলও দিচ্ছেন। তবে ভাল্লুক দেখতে পেলে ছবি তুলতে নিষেধ করছেন তাঁরা। সতর্ক থাকার কথা বলে মাইকিং শুরু করেছে পুরসভাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.