বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: এক যুবককে খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার তীব্র উত্তেজনা দেখা দিল নদিয়ার কল্যাণীতে। পুলিশ ওই যুবকের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ওঠে। তাই অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলে উত্তেজিত জনতা কল্যাণী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। কিন্তু, তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে থানার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকর্মীরা এলোপাথাড়ি লাঠি চালানো শুরু করেন বলে অভিযোগ। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে উত্তেজিত জনতা। পুলিশকর্মীরাও পালটা ইট ছোঁড়েন বলে অভিযোগ। প্রায় আধঘণ্টা ধরে এই অবস্থা চলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এপ্রসঙ্গে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভি এস আর অনন্তনাগ জানান, ওই যুবককে খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও তদন্ত চলছে। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে উত্তেজিত জনতাকে ব্যাপকহারে লাঠিচার্জ করার যে অভিযোগ উঠেছে, সেবিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলতে চাননি তিনি। শুধু বলেন, ‘ কী ঘটনা ঘটেছে, তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’
মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ কল্যাণী থানার চরজাজিরা গ্রামের যুবক মঙ্গল চৌধুরির রক্তাক্ত মৃতদেহ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে প্রাথমিক স্কুলের কাছে উদ্ধার হয়। তার ঘণ্টাদুয়েক আগেই বাড়িতে খাওয়ার সময় মোবাইলে ফোন এসেছিল মঙ্গলের। তড়িঘড়ি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যখন মৃতদেহ উদ্ধার হয় তখন মঙ্গলের মাথায় ও মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। যদিও পুলিশ মঙ্গলের দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথমে জানিয়েছিল। এমনকী, মঙ্গলের উদ্ধার করা অক্ষত মোটরবাইকটি পরে থানায় নিয়ে গিয়ে ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলের মাথায় ও মুখে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয় বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলের দাদা মনোজ চৌধুরি স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমার ভাই বিজেপি করত। তৃণমূলের লোকজন তাদের দলে আমার ভাইকে যোগ দেওয়ার জন্য ভীষণভাবে চাপ দিচ্ছিল। আমার ভাই তাতে রাজি না হওয়ার জন্যই খুন করা হয়েছে। অথচ আমার ভাইয়ের মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ওই মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে।’
ওই যুবককে নিজেদের দলের কার্যকর্তা বলে দাবি করে সায়ন্তন বসুর নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার মৃতের বাড়িতে যায়। সায়ন্তন বসু ওই যুবকের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘মঙ্গল আমাদের দলের কার্যকর্তা ছিলেন। মৃতের পরিবার ও গ্রামের লোকজন স্পষ্টই বলছেন, ‘তৃণমূলের গুণ্ডারা আমাদের দলের সক্রিয় কার্যকর্তাকে খুন করেছে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য ওরা ১৫ দিন সময় দিয়েছিল। যোগ না দেওয়ায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছে আমাদের সক্রিয় ওই কার্যকর্তাকে। পুলিশ অফিসার তৃণমূলের দালালের মত কাজ করছে।’
এপ্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কাঁচরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ সিনহা বলেছেন, ‘যেকোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। ওই যুবককে যদি খুন করা হয়ে থাকে, তাহলে ওই খুনের ঘটনায় কারা জড়িত পুলিশ তা তদন্ত করে দেখুক। বিজেপি অযথা একটি মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে। তৃণমূল কখনও খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.