সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল – এসব নিয়ে তৃণমূল নিজের অবস্থান আগে স্পষ্ট করুক। করিমপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রচার শুরুর আগে সোমবার তৃণমূলকে এই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। মঙ্গলবার তিনি প্রার্থীপদে মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন। তার আগে সোমবারই কৃষ্ণনগরে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপি প্রার্থী। সেখানেই তাঁর বক্তব্য, ‘শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, মহুয়া মৈত্র-সহ সবার কাছেই আমার একটাই প্রশ্ন, নাগরিকত্ব বিলে আপনাদের কী ভূমিকা হতে চলেছে? আপনারা করিমপুরে যদি কোন সভা করতে যান, সেখানে আপনারা করিমপুরের মানুষের কাছে স্পষ্ট করুন, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আপনাদের ভূমিকা কী? শুধু তাই নয়, আমরা করিমপুরের সব মানুষ এবং সব ভোটারকে বলব, আপনারাও প্রশ্ন করুন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কাছে, নাগরিকত্ব বিল হলে আপনারা যে নাগরিকত্বের রক্ষাকবচ পাবেন, সেই বিলে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন রয়েছে কিনা? তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে,তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা আসলে কী?’
সোমবার জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারকে পাশে নিয়ে নিজেকে নদিয়ার ‘ভূমিপুত্র’ হিসাবে দাবি জানিয়ে জয়প্রকাশ মজুমদারের সাফ কথা ‘কাগজপত্র থাকুক বা না থাকুক, সব হিন্দুরাই নাগরিকত্বের রক্ষাকবচ পাবেন। এনআরসি কবে এবং কীভাবে হবে, তা এখনও ঠিক হয়নিl সারা ভারতের সঙ্গে অসমের এনআরসিকে মিলিয়ে দেওয়া হলে, তা ভুল হবে।’ এনিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের একটা নির্দিষ্ট তালিকা থাকা দরকার। ১৯৫১ সালে আইন হওয়া সত্ত্বেও, এতদিন কাজে লাগানো হয়নি। বিজেপি ঠিক করেছে, সারা ভারতে এনআরসি হবে। কিন্তু সেটা নিয়ে ভয় দেখানোর যে চেষ্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলের লোকজন চালিয়ে যাচ্ছেন, মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন, সেটা বন্ধ হওয়া দরকার।’
মূলত করিমপুর বিধানসভার বিস্তীর্ণ এলাকা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এবারের উপনির্বাচনে এনআরসি যে অন্যতম বড় ইস্যু হতে চলেছে, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আর একে হাতিয়ার করেই প্রচারে নামবে বিজেপি। সেক্ষেত্রে বিজেপির প্রচারের লাইন কী হবে, তারই বিস্তারিত জবাব দিয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘আমরা করিমপুরের সব মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করব। এনআরসির আগে নাগরিকত্ব বিল লোকসভায় পাস হয়ে গেলেও তাতে যে সংশোধনী আসছে, তাতে তৃণমূল কংগ্রেস কী ভূমিকা নেবে, তাতে তাদের সমর্থন আছে কি নেই, সেটা আগে তারা স্পষ্ট করুন মানুষের কাছে।’ এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলন, ‘এই বাংলায় উদ্বাস্তু, শরণার্থী, মতুয়া, নমঃশূদ্র – যারা ওপার বাংলা থেকে এসেছেন, তাঁদের ভোট ব্যাংককে কবজা করে, ভয় দেখিয়ে, নাগরিকত্ব সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে, তৃণমূল কংগ্রেস যে রাজনীতি করে চলেছে, নাগরিকত্ব বিলে তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করলে তা মানুষ বুঝতে পারবেন।’
ভোটের পরিসংখ্যান দেখিয়ে বিজেপি প্রার্থীর দাবি, লোকসভা নির্বাচনে এই করিমপুর বিধানসভায় বিজেপির ভোট ২৩০০০ থেকে বেড়ে ৭৩০০০ হয়েছিল। এবারের ভোটে তা বেড়ে ১ লক্ষ ২৩ হাজারে গিয়ে পৌছবে।’ উপনির্বাচনে লড়াই মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে হচ্ছে বলেই মনে করছেন জয়প্রকাশ। তাঁর আরও দাবি, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী নিজেকে করিমপুরের লোক বলে দাবি করলেও তিনি কোনওদিনই করিমপুরের লোক নন। করিমপুরের তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে তিনি এর আগে নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন না। বরং অন্য জায়গায় কাজ করেছেন।’ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, প্রচার শুরুর আগেই যেভাবে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী, তাতে লড়াই আরও কঠিন করে তুললেন।
উলটো দিকে, জয়প্রকাশের এই বক্তব্যের পালটা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার করিমপুরের তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন পেশের সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিভ্রান্ত এবং গুজব রটানো হচ্ছে।’
শুনুন জয়প্রকাশের বক্তব্য:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.