ছবিতে মেদিনীপুর শহরে ডিএসপিকে ঘিরে বিজেপির মারমুখী মহিলা কর্মীরা।
সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বিজেপির ডাকা বনধকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুর। বনধ সফলের নামে রীতিমতো গুন্ডামি করতে দেখা গেল বিজেপির কর্মী সমর্থকদের। প্রকাশ্যে থানার আইসি-কে পেটানোর অভিযোগ উঠল বিজেপির জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ শুধু আইসি-ই নন, বিজেপির মহিলা মোর্চার সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন ডিএসপি দেবশ্রী সান্যাল। এর জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শহরের বটতলা রোড।
বটতলা রোড একটি বাজার এলাকা। সেখানে সকাল থেকেই দোকানপাট খোলা ছিল। বেলা বাড়তেই পথে নামে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। জোর করে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ এর বিরোধিতা করতেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এদিকে অশান্তির খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছান কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত আইসি হীরক বিশ্বাস। সঙ্গে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। বনধ সমর্থকদের আটকাতে গেলে জনতা পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই সময় আচমকাই আইসি হীরক বিশ্বাসের উপরে চড়াও হন বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি সমিত দাস। আইসির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ছড়াতেই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি দেবশ্রী সান্যাল। ডিএসপিকে দেখতে পেয়েই মারমুখী হয়ে ওঠে মহিলা মোর্চার কর্মীরা। ডিএসপি-র উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিজেপির কর্মী সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে আসরে নামে পুলিশ। সমিত দাশ-সহ মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোটা ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।
একই অবস্থা ঝাড়গ্রামেও। সকাল থেকে বনধকে ঘিরে অশান্তি ছড়ায় লালগড় থানার বৈতা এলাকায়। সরকারি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। বনধে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা মারমুখী হয়ে উঠবে। এই আশঙ্কা থেকেই দোকানপাট খোলেননি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যদিও ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান নিজে থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে দোকানপাট খোলা রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে বিজেপির হামলা থেকে বাঁচতে কেউ দোকান খোলেননি। বিনপুরেও এদিন বনধ সফল করতে পথে বসে পড়ে বিজেপির কর্মীরা। পরে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। দহিজুড়িতে বনধকে ঘিরে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিজেপি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা এলাকায় এসে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে। খবর পেয়েই আসরে নামেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। অভিযুক্ত বিজেপি কর্মীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। বিজেপির দাবি, সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের এক নেতা আহত হয়েছেন। যদিও আক্রান্তের আঘাত গুরুতর নয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মানিকপাড়ার খালশিউলিতেও বনধের সমর্থনে পথে নামে বিজেপি। এরকই সঙ্গে বনধের বিরোধিতায় মিছিল করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এর জেরে আহত হয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। লোধাশুলিতেও বনধকে কেন্দ্র করে জাতীয় সড়কে অবরোধের জেরে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে।
মালদহে বনধ সফল করতে বিজেপির কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা-সহ কোতয়ালি রাজ্য সড়কেও বিজেপির কর্মী সমর্থকদের হিংসা দেখল জনতা। ট্রাক ভাঙচুর থেকে শুরু করে মারধর কিছুই বাদ যায়নি। ঘটনাস্থলে স্থানীয় থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়্ন্ত্রণে আনে। এদিকে সংঘর্ষের মহিলা কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিজেপির। বিজেপির বনধকে ঘিরে হামলার ঘটনায় শান্তি মিছিল করে তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা অম্লান ভাদুড়ির নেতৃত্বে বাইক মিছিল চলে এলাকায়। শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবরোধ থাকলেও কিঠু সরকারি বাস চলেছে। তবে অশান্তিকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশি টহল চলছে। এদিকে শিলিগুড়ি শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বিজেপির পার্টি অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির শাসকদল তৃণমূলের দিকে। যদিও অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে, রেলের জমিতেই দলীয় কার্যালয় করেছিল বিজেপি। অনেকদিন ধরে ভাঙতে বলেও গা করেনি বিজেপি নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.