সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: রাত পেরোলেই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। তার আগে শনিবার প্রচার শেষে জমে উঠল রাজনীতির তরজা। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে চলল তৃণমূল ও বিজেপির অভিযোগ, পালটা অভিযোগের পালা। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘সিআরপিএফ তো ছিলই। আবার পাঁচ ব্যাটালিয়ন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে কেন? এটা অন্যায়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে।’ পালটা বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘ভোটে হারার ভয় থেকেই এসব বলছে তৃণমূল। এটা হাস্যকর।’
করিমপুর, কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর সদর সোমবার এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগরের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় আসনটি ফাঁকা হয়। খড়গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও লোকসভা ভোটে জিতে যাওয়ায় আসনটি ফাঁকা হয়। আর উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায় মারা যান চলতি বছরেই। ফলে সেই আসনেও উপনির্বাচন। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মত, তিন আসনের মধ্যে অন্তত দু’টি আসনে বিজেপির কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে তৃণমূল।
করিমপুরে বুথের সংখ্যা ২৬১টি। কালিয়াগঞ্জ এবং খড়গপুর সদরে বুথের সংখ্যা ২৭০টি করে। করিমপুরে ১০ ও বাকি দু’টি কেন্দ্রে থাকছে ৫ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তিন কেন্দ্রের নির্বাচন দেখভালের জন্য আগেই তিনজন পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কমিশন। এছাড়া তিন কেন্দ্রের জন্যই সাধারণ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
গত লোকসভা ভোটে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কালিয়াগঞ্জ পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে থাকলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের আটটি আসনের মধ্যে সাতটিই রয়েছে বিজেপির দখলে। অন্যদিকে, খড়গপুর সদরেও বিজেপির কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ গত লোকসভা ভোটে এই খড়গপুর বিধানসভায় ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। তবে করিমপুরে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটে এখান থেকে ১৫ হাজারের লিড পেয়েছিল তৃণমূল। সীমান্ত এলাকায় আবার এনআরসি নিয়ে বিজেপি ব্যাকফুটে। একটা সময় ভোট হলে এই এলাকায় ৮-৯ জন প্রার্থী দাঁড়াতেন। তবে এখন লড়াই বিজেপি আর তৃণমূলের সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই সংখ্যা কমেছে। একইসঙ্গে চিন্তা বাড়িয়েছে সেইসব প্রার্থীদের পাওয়া অন্তত ১২ হাজার ভোট। যা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর এখানে কংগ্রেস-সিপিএম জোট কোনওভাবে বেশি ভোট কাটতে পারলে লাভ বিজেপিরও হতে পারে।
এর মধ্যে আবার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আবদুল মান্নানের একটি চিঠি নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে লেখা ওই চিঠিতে তিনি করিমপুরে সিপিএম ও খড়গপুরে তৃণমূলকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন। শেষ পর্বের প্রচার সেরে আপাতত সেই ইস্যুগুলিরই হিসেব কষা চলছে।
শনিবার তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারের সমর্থনে খড়গপুর সদরের পাঁচবেড়িয়া থেকে পদযাত্রায় অংশ নেন রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আরেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী প্রার্থীর সমর্থনে খড়িদা বড়বাতি থেকে র্যালি করেন। সকালে দিলীপ ঘোষ ও কৈলাস বিজয়বর্গীয় খড়গপুরের রিলায়েন্স পেট্রল পাম্প থেকে গোলবাজার রামমন্দির পর্যন্ত বিজেপি প্রার্থী প্রেমচন্দ্র ঝার সমর্থনে বিশাল র্যালি করেন। জোটপ্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের সমর্থনেও বাইক র্যালি হয়। শেষ প্রচারের উত্তাপ ছিল কালিয়াগঞ্জেও। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের দলীয় প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকারের সমর্থনে র্যালি করার কথা ছিল। কিন্তু, পুলিশের অনুমতি মেলেনি। তাই তিনি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। বিজেপির প্রার্থীর মেয়ের বিয়ে ছিল এদিন। তাঁকে আশীর্বাদ করতে গিয়ে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেন তিনি। তবে কালিয়াগঞ্জে তৃণমূলের প্রচারে ঘাটালের সাংসদ দেবের রোড শো ছিল জমজমাট। বাম-কংগ্রেস প্রার্থী প্রাক্তন বিধায়ক কন্যা ধীতশ্রী রায়ের প্রচারেও সভা হয় কালিয়াগঞ্জে।
করিমপুরে প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহরায়ের সমর্থনে শেষ পর্বে রাস্তায় ছিলেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এখানে এসে জনগণকে চমক দেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এবং অভিনেতা বনি ও কৌশানি। অন্যদিকে বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদারের হয়ে প্রচার সেরেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। আর জোট প্রার্থী সিপিএমের গোলাম রাব্বিকে নিয়ে প্রচার করেন সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.