চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: তিনি নাকি মেদিনীপুরের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে সেখানকার একটি গাছের পাতাও নাকি নড়ে না! অথচ সেই শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নাকের ডগা দিয়ে ৩২ জন নেতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন ৫০০ বিজেপি কর্মী। এবার সেই বিরোধী দলনেতার চোখের সামনে রাতারাতি বদলে গেল দলীয় কার্যালয়ের ঠিকানা, অথচ তিনি জানতেই পারলেন না। বিজেপির (BJP) নন্দীগ্রাম -১ দক্ষিণ মণ্ডল কার্যালয় রাতারাতি হয়ে গেল তৃণমূলের গোকুলনগর অঞ্চল কার্যালয়। রাতারাতি এই বদল সম্পর্কে সদ্য বিজেপিত্যাগী জয়দেব দাস বলছেন, “এটাই নন্দীগ্রাম (Nandigram)। নন্দীগ্রাম কখনও বশ্যতা স্বীকার করতে জানে না। ধান্দাবাজদের যোগ্য জবাব দিতে জানে।”
শুক্রবারই দল বদলেছেন আদি বিজেপির বহু নেতাকর্মী। তারপরই রাতেই এলাকার মানুষের সহযোগিতায় চরিত্র বদলেছে বিজেপির কার্যালয়। নন্দীগ্রামের মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণে সিঁটিয়ে গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তৃণমূলে যোগ দিয়ে এলাকায় বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বিজেপিত্যাগী নেতা-কর্মীরা । তাঁদের মূল দাবি, এলাকার উন্নয়ন চাই। রাজ্যে শাসকদলের হাত শক্তিশালী করে সেই কাজের অংশীদার হতে চান তাঁরা।
বিজেপিত্যাগীদের ক্ষোভের মাত্রা এতটাই ছিল যে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিজেপির ওই দলীয় কার্যালয় থেকে নরেন্দ্র মোদি,অমিত শাহ,জেপি নাড্ডা, দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদারদের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। সরানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিশাল কাটআউট। আর সেই জায়গায় এসেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের ছবি-সহ বিশাল বিশাল ব্যানার। এমন দ্রুত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দায়িত্ব নেওয়ার পরই শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে কাঁপুনি ধরিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। শুক্রবার তৃণমূলের মুখপাত্রর হাত থেকে জয়দেব দাস তৃণমূলের পতাকা ধরেছেন। তাঁর ৩২ জন নেতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন ৫০০ বিজেপি কর্মী। বিজেপি শিবিরে সেই ভাঙন এখন নন্দীগ্রাম-সহ রাজ্য রাজনীতির চর্চার বিষয়। নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের পাশাপাশি সোনাচূড়া,কালিচরণপুর, হরিপুর, ভেকুটিয়া, আমদাবাদ, বিরুলিয়া, বয়াল-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি ছাড়ার হিড়িক পড়েছে।
এই বদলের অন্যতম কাণ্ডারী জয়দেব দাস বলছেন,”এলাকার মানুষকে চাপ দিতে হয়নি। বাবা-বাছা করে বোঝাতে হয়নি। বিজেপি’র বিভেদকামী নীতি, শুভেন্দু অধিকারীর মতো স্বৈরাচারী-স্বার্থপর-প্রতিহিংসাপরায়ণ লোকদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মানুষ স্বেচ্ছায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। এটাই নন্দীগ্রাম । নন্দীগ্রাম কখনও বশ্যতা স্বীকার করতে জানে না। ধান্দাবাজদের যোগ্য জবাব দিতে জানে ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.