ছবি: প্রতীকী।
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: একদিকে নিজের গড় রক্ষার লড়াই বিজেপির, তো অন্যদিকে জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল, সিপিএমের পালেও বইছে ‘ইতিবাচক’ হাওয়া। ত্রিমুখী লড়াইয়ে এবার জমজমাট জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রাম (Jhargram)। লোকসভার নিরিখে এই বিধানসভা আসনে সহজ জয় পাওয়ার কথা গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘ফাঁকা’ সভাস্থলের ছবি দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে পদ্ম শিবিরের নেতাদের। উলটো দিকে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার আশা দেখছেন তৃণমূল নেতারা। সে পথে অবশ্য কাঁটা দুর্নীতি, স্বজনপোষণের মতো ইস্যুগুলি। সবমিলিয়ে ঝাড়গ্রামের চার আসনেই এবার ‘হাড্ডাহাড্ডি’ ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
ইতিহাস বলছে, ২০১৬-র নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি বিধানসভা আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন। তবে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে গেরুয়া শিবিরের পালে হাওয়া লেগেছে। একইসময় ধস নেমেছিল বাম সংগঠনগুলির অন্দরেও। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি দখল করেছিল ২৪টি। আসন পেয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদেও। এরপর ২০১৯ লোকসভা ভোটে বাজিমাত করে গেরুয়া শিবির। ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনটি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নেয় তারা। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিনপুর ছাড়া জেলার বাকি তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলকে টেক্কা দিয়েছিল বিজেপি। একমাত্র বিনপুর বিধানসভাতেই তিন হাজারে কিছু বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির।
তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (WB Assembly Election 2021) ঝাড়গ্রামে বিজেপির ‘ক্লিন সুইপ’ পাওয়া বেশ কঠিন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। জঙ্গল মহলের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই পালন করেনি তাঁরা। উলটে বিজেপির প্রতি ক্ষুব্ধ আদিবাসীদের একাংশ। বরং আমজনতার মন জিতেছে রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘দুয়ারে সরকারে’র মতো প্রকল্পগুলি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পগুলি তৃণমূলের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়েছে খানিকটা। তবে চার বিধানসভায় তৃণমূলকে ‘অক্সিজেন’ জোগাচ্ছে অন্য দুটি ফ্যাক্টর।
এক, সিপিএম হারানো জমি বেশকিছুটা পুনরুদ্ধার করেছে। গেরুয়া শিবির থেকে লালে ফিরছেন কর্মী-সমর্থকরা। আর বামফ্রন্টের ভোট যত বাড়বে ততই চাপ বাড়বে বিজেপির উপর। লাভবান হবে তৃণমূল।
দুই, ঝাড়গ্রাম থেকে এবার তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিচ্ছে না ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)। ফলে ২৬ শতাংশ আদিবাসী ভোটের অনেকটা তৃণমূলের ঝুলিতে আসবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সবমিলিয়ে এবার ঝাড়গ্রামের চার বিধানসভা কেন্দ্রেয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
নয়াগ্রাম (তফসিলি উপজাতি): তৃণমূলের প্রার্থী দুলাল মুর্মু। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বকুল মুর্মু এবং সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন হরিপদ সোরেন।
গোপীবল্লভপুর: তৃণমূল প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ মাহাতো। বিজেপির প্রার্থী সঞ্জিত মাহাতো। সিপিএমের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রশান্ত দাস।
ঝাড়গ্রাম: তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা হাঁসদা। বিজেপির প্রার্থী সুখময় শতপথী এবং সিপিএমের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন মধুজা সেনরায়।
বিনপুর (তফসিলি উপজাতি): দেবনাথ হাঁসদা এবার তৃণমূলের প্রার্থী। বিজেপির প্রার্থী পালহান সোরেন এবং সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.