রাজা দাস, বালুরঘাট: কুমারগঞ্জের নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। ফুলবাড়ি এলাকায় তাঁর পথসভা করার কথা রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলনের রূপরেখাও তৈরি করে দিয়ে যাবেন তিনি। এদিকে জেলা আদালতের বিচারকের সামনে মৃত কিশোরীর পরিবার-সহ চাদরের দোকানের মালিক কার্তিক দেবনাথের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
কুমারগঞ্জের বেলঘর এলাকায় কিশোরীকে গণধর্ষণের পর খুন এবং পেট্রোল ছিটিয়ে দেহ জ্বালিয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার ঘটনায় ধৃত তিনজন মাহাবুর মিঁয়া, গৌতম বর্মন এবং পঙ্কজ বর্মন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। জানা গিয়েছে, রবিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে কিশোরী তিন যুবকের সঙ্গে বাড়ির কাছে ফুলবাড়ি বাজারে কাপড়ের দোকানে যায়। দোকানের মালিক কার্তিক দেবনাথ জানিয়েছেন, রবিবার বেলা আড়াইটা নাগাদ মেয়েটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিল। মিনিট পাঁচেক পর বাইক নিয়ে তিনজন যুবক আসে। ওদের মধ্যে দু’জন মেয়েটিকে নিয়ে দোকানে ঢোকে। একটি বাটিক প্রিন্টের চাদর এবং রুমাল কেনে। এক যুবক পাঁচশো টাকার নোট বের করে দেয়। দাম নিয়ে বাকি তিনশো টাকা ফেরত দেন তিনি। মেয়েটি চাদর গায়ে জড়িয়ে নেয়। রুমাল নেয় একজন যুবক। কিশোরীকে চিনেছিলেন তিনি। কিন্তু যুবকের মাথা মুখ টুপি, মাফলারে জড়ানো ছিল। কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশা থাকায় সন্দেহ হয়নি। তাঁর স্পষ্ট মনে আছে বাইকটি নীল রঙের ছিল। পাশাপাশি জবানবন্দি দিতে যাওয়া কিশোরীর ভাই জানিয়েছেন, বোনের সঙ্গে প্রেম ছিল মাহাবুরের। বাড়িতে এসে বোনের উপর মাঝেমধ্যে অত্যাচার করত ছেলেটি। এদিন মৃত কিশোরীর দাদা ধৃতদের ফাঁসির দাবি করেন।
আজ ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বালুরঘাট থেকে তিনি গঙ্গারামপুর থানার উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চগ্রামে যাবেন। তারপর এই ঘটনার প্রতিবাদে ফুলবাড়ি এলাকায় পথসভা করবেন। সেখানে থাকবেন স্থানীয় সাংসদ সুকান্ত মজুমদার-সহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এদিনের পথসভার পরই যে ওই ইস্যুতে বিজেপি জেলা জুড়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে নামছে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি। লকেটের কুমারগঞ্জ আসা প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি বিনয় বর্মন বলেন, “মহিলা নেত্রী আজ আসছেন। ঘটনায় ধৃতদের চরম শাস্তির দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হবে।” ইতিমধ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে তপনের বালাপুরে এই ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিল বের হয়।
উত্তরবঙ্গে এত নৃশংস কোনও ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটা স্থানীয় বাসিন্দারা স্মরণে আনতে পারেননি। ইতিমধ্যে এই নির্মম ঘটনার প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উত্তরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সংগঠন ধৃতদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। কিন্তু শুক্রবারও রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের কোনও বক্তব্য মেলেনি। তেলেঙ্গানার ঘটনার প্রতিবাদে যে বুদ্ধিজীবীরা রাজপথ তোলপাড় করেছেন, তাঁদের এমন নীরবতা ঘিরে জেলা জুড়ে বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.