হুগলিতে আমফানের ফলে মৃত এক ব্যক্তির বাড়িতে বিজেপি নেতৃত্ব
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দ্বিতীয় মোদি সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ায় আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু রীতিমতো মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। বললেন ‘দিদি করোনা সামলাতে কেন্দ্রকে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছেন। আমি ক্যামেরার সামনে বলছি মুখ্যমন্ত্রী এক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করুন। এক ঘণ্টার মধ্যে দায়িত্ব নিয়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি করে কেন্দ্র দেখাবে। তারপর উনি আবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসুন।’ এভাবেই কার্যত এদিন রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকে প্রকাশ্যে তুলে ধরে নিজেদের অনেক বেশি দায়িত্ববান বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন সায়ন্তনবাবু।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সায়ন্তনবাবু ও হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় আমফানের তাণ্ডবে মৃত চুঁচুড়া ও বাঁশবেড়িয়ার দুই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানান। পরে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কটাক্ষ করেন সায়ন্তন বসু। বলেন, ‘এই রাজ্যের ৪৫ লক্ষ শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ করেন। তাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কোনও দরদ নেই। সেখানে পিকে এই রাজ্যের লোক না হওয়া স্বত্বেও তাঁকে রাজ্যে ফেরানোর জন্য ভাবনাচিন্তা করছেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্যও সিইএসসিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যেখানে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের লাইন আছে সেখানে কী করছে রাজ্য সরকার। সিইএসসিতে ঘরের লোককে চাকরি দেবেন। প্যাঁচার ছবি পাঁচকোটি টাকায় বিক্রি করবেন। আর নির্বাচনের সময় সিইএসসি থেকে ১৩০০ কোটি টাকা সাহায্য নেবেন। তারপর মনোপলি রাজ খতম করব বললেও খতম হতে পারে না। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবে।’
সম্প্রতি তেলিনিপাড়ার গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দেন সায়ন্তন। তিনি বলেন, ‘তেলিনিপাড়ায় বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের মানুষ আসে যাঁদের অনেকেরই মধ্যে করোনা পজিটিভ আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাঁদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়। বহু নিরীহ মানুষ মার খেয়েছেন। বিজেপির কার্যকর্তারা যাঁরা সামলাতে গিয়েছিলেন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে কমিউনাল স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যতক্ষণ না কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ততক্ষণ আমরা ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের কোনও আমলা, মন্ত্রী ও কর্মী এদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন না। আমাদের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তেলিনিপাড়ায় ঢুকতে না দিয়ে তাঁকে নোটিস পাঠিয়েছে। পার্লামেন্ট খোলার পর আমরাও এদের বিরুদ্ধে নোটিস পাঠাব। এই বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও হয়েছে।’
এরই পাশাপাশি সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় তাঁদের গাড়ির উপর হামলা প্রসঙ্গে নাম না করে হুগলি জেলার তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবকে আক্রমণ করেন সায়ন্তন। বলেন, ‘উত্তরপাড়ার এক তৃণমূলের গুণ্ডা আমাকে বলেছিলেন হুগলিতে ঢুকতে দেবেন না। কিন্তু, আমি আজ হুগলিতে এসে প্রমাণ করে দিয়েছি বিজেপিকে এভাবে আটকানো যাবে না।’
সায়ন্তনের পাশাপাশি আজ পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। পরিযায়ীদের নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যদি বলেন পরিযায়ীদের রাখার জায়গা নেই তবে বুঝতে হবে পশ্চিমবঙ্গের পরিকাঠামো ব্যর্থ হয়েছে। তাই উনি এই ধরনের কথা বলছেন।’
বিজেপি নেতাদের এই আক্রমণের জবাবে তৃণমূল জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘ওনাদের কোনও কাজ নেই। মোদির ড্রাম বাজানো ছাড়া ওনারা কিছুই জানেন না। আজও ডানকুনিতে ১৮টা শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন ঢুকছে ভিনরাজ্য থেকে। আমরা সবসময় যে এই সকল পরিযায়ীদের পাশে আছি তা মানুষ ভালভাবে জানেন। হুগলি কেন সারা রাজ্যের মানুষ জানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের পাশে আছেন।’
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.