সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) পর এবার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। নিজের গাড়ির ধাক্কায় জখমের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন বিজেপির সাংসদ! রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান শহরে। ঊষা হাটি নামে জখম মহিলাকে রাস্তায় কাতরাতে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন কাউন্সিলর তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী শিখা দত্ত সেনগুপ্ত। পরে ওই মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসার তদারকি করেন।
বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুর এলাকায় বাড়ি উষা হাটি নামে ওই মহিলার। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামী কয়েকমাস আগে মারা গিয়েছেন। এদিন তিনি কালিবাজারের দিক থেকে এসে বীরহাটা মোড়ে উঠছিলেন সাইকেল নিয়ে। সেই সময় বর্ধমান স্টেশনের দিক থেকে বিজেপি সাংসদের গাড়িটি এসে তাঁকে ধাক্কা মারে। ওই মহিলা বলেন, “আলুলিয়ার গাড়ির ধাক্কায় হাতে কোমরে, কুঁচকিতে আঘাত লেগেছে। উনি গাড়ি থেকে নামার সৌজন্যতাটুকু দেখালেন না। মুখ বাড়িয়ে দেখলেন শুধু। পিছনে সিট থেকে একজন নেমে বললো অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে আর কী করা যাবে। আমি বললাম আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু করে দিন। কাঁচ তুলে দিয়ে উনি গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। আমি গরিব মানুষ। উনি চিকিৎসাটুকু করাতে পারতেন।”
সেই সময়ই ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী শিখা দত্ত সেনগুপ্ত। তিনি মহিলার ওই অবস্থা দেখে তাঁকে তুলে নিয়ে যান কাছের একটি স্বাস্থ্য শিবিরে। সেখানে চিকিৎসক দেখে এক্স-রে সহ বেশ কিছু পরীক্ষা করানোর কথা জানান। এরপর ওই মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। শিখাদেবী বলেন, “মানবিকতা বলে কিছু নেই বিজেপি সাংসদের। তাঁর গাড়ির ধাক্কায় মহিলা জখম হলেন। অথচ ন্যূনতম চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থাটুকুও করলেন না সাংসদ। এটাই বিজেপি।” তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস বলেন, “বিজেপির মানবিকতা বলে কিছু নেই। এর আগেও বিজেপি নেতার গাড়ির ধাক্কায় মানুষ মারা গিয়েছে অন্যত্র। কিন্তু কোনও মানবিকতা দেখায়নি। এখানেও সাংসদ তাই করেছেন। জখম মহিলার চিকিৎসা চলছে। আমরা পাশে আছি।”
গত মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর এলাকায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের একটি গাড়ির ধাক্কায় একজনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বিরোধী দলনেতা দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানোর সৌজন্যটুকু দেখাননি। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ হয়েছিল সেদিন। এদিন তেমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল বর্ধমান। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উনি সাংসদ হলেও ওনাকে এলাকায় দেখা যায় না। এদিন অমানবিকতার নজির রাখলেন।”
বিজেপি সাংসদের সঙ্গে এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “এমন কিছু ঘটেছে আমার জানা নেই। আমাদের মানবিক সাংসদ এলাকার বহু মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এদিন গুরুতর কিছু নয় মনে করে চলে গিয়ে থাকতে পারেন। আমরা ওই মহিলার পাশে থাকব। চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসদের গাড়ির ধাক্কায় জখম ঊষা হাটির কাঁধের ও হাতের হাড় ভেঙেছে। হাতে প্লাস্টার করা হয়েছে। এছাড়া আভ্যন্তরীণ আঘাতও রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.