অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: শীত আর কুয়াশাঘেরা পাহাড়ে ফের আঁচ বাড়াল ‘গোর্খাল্যান্ড’ ইস্যু। আবারও পৃথক রাজ্যের দাবি উসকে উঠল। এবার সুর চড়ালেন কার্শিয়ংয়ের বিজেপি (BJP) বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। পাহাড়বাসীর উন্নয়নের স্বার্থে উত্তরবঙ্গ ভেঙে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের (Gorkhaland) দাবিতে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠি লিখলেন তিনি। এ বিষয়ে নাড্ডাকে হস্তক্ষেপের আরজি বিধায়কের। পাশাপাশি পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় রাজ্য সরকারের রেশন পৌঁছে দেওয়া এবং পাহাড়ে এইমস (AIIMS) তৈরির দাবিও তুললেন। তৃণমূল যদিও বিজেপির এই দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এসব পাগলামি। গুরুত্বহীন দাবি।”
সোমবার বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে (JP Nadda) চিঠি লিখে কার্শিয়ংয়ের বিধায়কের বক্তব্য, পাহাড়ের মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। ২০১৯ ও ২০২১ নির্বাচনে দার্জিলিং পাহাড় থেকে ৩ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ডুয়ার্স থেকেও ভাল ভোট পেয়েছে বিজেপি। তাই পাহাড়ের মানুষের ভাবাবেগ ও উন্নয়নের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হোক। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর দাবি, যথাযথ উন্নয়নের জন্য পৃথক রাজ্য প্রয়োজন। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে গোর্খা (Gorkha) জনজাতি নিজের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়কের আরও দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে পাহাড়ে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
মাস ছয় আগে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সুর চড়িয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা (John Barla)। উত্তরবঙ্গের মানুষ বঞ্চিত, এখানে কোনও উন্নয়ন হয়নি। আর তাই উত্তরবঙ্গের মানুষেরই নাকি দাবি, এই অঞ্চলকে আলাদা রাজ্য করা হোক। একাধিকবার তিনি নিজের দাবির স্বপক্ষে যুক্তি সাজান। বিরোধিতার মুখে পড়লেও কোনওভাবেই আলাদা রাজ্যের দাবি থেকে সরেননি বিজেপি সাংসদ। পরে তাঁকে সমর্থন করেছিলেন অনেকেই। বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির আনন্দময় বর্মন ও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির শিখা চট্টোপাধ্যায় – সকলেই বার্লার পক্ষ নেন। উত্তরবঙ্গে পৃথক ‘গোর্খাল্যান্ড’ নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও বিজেপিরই অনেকে বার্লার এই দাবির সঙ্গে একমত হননি। তাঁরা অখণ্ড বাংলার পক্ষেই মতপ্রকাশ করেছিলেন। ফলে পাহাড়ে এই আঁচ থিতিয়ে এসেছিল। এই মুহূর্তে যা নতুন করে উসকে উঠল বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার চিঠি ঘিরে। একদিকে যখন বিমল গুরুং-রোশন গিরির মতো দার্জিলিংয়ের একদা প্রভাবশালী নেতা কলকাতায় এসে পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের (Parmanent Political Solution) দাবিতে কার্যত মন্ত্রীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেও যখন পাহাড়ে গিয়ে GTA নির্বাচনের মাধ্যমে পাহাড়ে থমকে থাকা উন্নয়নের দরজা খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময় বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি লিখে কার্শিয়ংয়ের বিজেপি বিধায়কের চিঠি প্রক্রিয়ায় ধাক্কা দিল বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.