বাবুল হক, মালদহ: দিল্লিতে বিজেপির (BJP) প্রধান ‘শত্রু’ বাম-কংগ্রেস। আর বাংলায় যেন ধোয়া তুলসিপাতা! তৃণমূলের (TMC) আশঙ্কার সঙ্গেই কি মিলে যেতে চলেছে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির রণকৌশল? তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলল এবার। দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন (WB Panchayet Election)। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদহে গেরুয়া শিবিরের সেই ‘অঘোষিত’ রণকৌশল কার্যত প্রকাশ্যে জানিয়ে দিল বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য কমিটির সভাপতি অজিত দাসের ঘোষণা, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সমস্ত বুথে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী থাকবে না, সেই সব বুথে তৃণমূলকে হারাতে বাম-কংগ্রেস (Left-Congress) জোটকেই সমর্থন করবে বিজেপি!
দলের সদর দপ্তরে বসে বাম-কংগ্রেসকে সমর্থন করার বিষয়টি কার্যত প্রকাশ্যেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য কমিটির সভাপতি অজিত দাস। মালদহ (Maldah) শহরের পুড়াটুলিতে দলের সদর দপ্তরে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির দক্ষিণ মালদহের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ-সহ জেলার সংখ্যালঘু সেলের অন্যান্য নেতারা।
পরে গেরুয়া শিবিরের সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য কমিটির সভাপতি অজিত দাস সাংবাদিকদের বলেন, “মুসলিম অধ্যুষিত বহু এলাকায় আমরা বুথ কমিটি গঠন করতে পারিনি। সেই বুথে বিজেপির প্রার্থীও থাকবে না। অথচ সেই সব জায়গায় বিজেপির সমর্থক একাধিক পরিবার রয়েছে। তাঁদের ভোটেই সেই সব বুথে জয়-পরাজয় নির্ভর করতে পারে।” মোর্চার রাজ্য সভাপতি বলেন, “বিজেপির প্রার্থী না থাকলে আমরা তাঁকেই ভোট দিতে বলব, যিনি তৃণমূলকে হারাতে পারবেন। সিপিএম যদি সেই বুথে তৃণমূলকে হারাতে পারে তাহলে সিপিএমকে, কংগ্রেস হারাতে পারলে কংগ্রেসকেই ভোট দিতে বলব। আমাদের লক্ষ্য একটাই, বাংলা থেকে তৃণমূলকে মুছে ফেলতে হবে। তৃণমূলকে আর মানুষ চাইছেন না।”
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় গেরুয়া শিবিরের অবস্থাটা খুবই দুর্বল। নেই বুথ কমিটিও। তা মানছেন দলের জেলা নেতারাও। মুসলিম অধ্যুষিত মালদহ ও মুর্শিদাবাদ-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এবারও যথারীতি পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দিতে পারবে না বিজেপি। জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ করে অর্থাৎCAA কিংবা NRC চালু করে রাজ্য থেকে সংখ্যালঘুদের একটা অংশকে ‘বিতাড়িত’ করতে চাওয়ার মতো গেরুয়া-হুমকি মুসলিম ভোটব্যাংকে বিজেপি-বিরোধী শিবিরে এককাট্টা করে দিয়েছে। বিজেপির জেলার নেতারাও তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে বিজেপি কোনও কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। মালদহের কালিয়াচক, মোথাবাড়ি, রতুয়া, চাঁচোলের মতো ব্লকে বিজেপির বুথ কমিটি নেই।
একুশের বিধানসভা ভোটের (Assembly Election 2021) আগে মালদহকে দু’টি সাংগঠনিক জেলা হিসাবে বিজেপি ভাগ করে। মালদহ জেলায় মোট ২৯৮৮টি বুথ রয়েছে। দক্ষিণ মালদহে ১১৯৪টি এবং উত্তর মালদহে ১৭৯৪টি বুথ রয়েছে। এর মধ্যে, দক্ষিণে ৩০০ এবং উত্তরে ৫০০-এর মতো বুথে কোনও বুথ কমিটি নেই বিজেপির বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ মালদহের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ। মালদহ জেলায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ত্রিস্তরে ৬৫৪ জন প্রার্থী জয়ী হন। তার মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জেলা পরিষদে জয়ী ৬ বিজেপির মধ্যে ৩ জন তৃণমূলে গিয়েছেন। বিজেপির ২৭ জন প্রধানের মধ্যে ঘাসফুলে ভিড়েছেন ১৪ জন। এখন ফের তাঁরা ফিরছেন বলে জেলা নেতৃত্বের দাবি। বিজেপি জেলা সভাপতি বলেন, “আমরা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বুথ কমিটি গঠন করতে পারিনি। দলের সংখ্যালঘু মোর্চার কাছে আবেদন করলে মুসলিমরাও পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী হতে পারবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.