তরুণকান্তি দাস: রং বদলাচ্ছে পাহাড়। দার্জিলিংয়ের মোর্চা বিধায়ক অমর সিং রাইকে তৃণমূল প্রার্থী করার পর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ওই আসনে এবার শাসক দলের জয়ের পথ প্রশস্ত। এই অবস্থায় বিজেপিও সেখানে তাদের প্রতীকে কাউকে দাঁড় করানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ছবিটা বদলে গিয়ে একদা মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের গোষ্ঠীর হাত ধরতে চলেছেন জিএনএলএফ নেতা মন ঘিসিং। এক সময় মন ঘিসিংয়ের বাবা পাহাড়ের অবিসংবাদী নেতা তথা গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা সুবাস ঘিসিংকে পিছন থেকে ছুরি মেরে ক্ষমতা দখল করেছিলেন বিমল গুরুং। গড়ে তুলেছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কালের নিয়মে গুরুংয়ের ক্ষমতা গড়িয়ে পড়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার খাদে। সেখান থেকে ফের উঠে আসা ওই পাহাড়ের শীর্ষ ছোঁয়ার মতোই কল্পনা। গুরুংয়ের চেয়ারে আসীন একদা তাঁরই ঘনিষ্ঠ বিনয় তামাং। পাহাড়ে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন বিনয়রা। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি স্থানীয় দলগুলির জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পুরনো ছকেই বহিরাগত কাউকে দাঁড় করিয়ে সংসদে নিয়ে যেতে মরিয়া।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এখানকার দলগুলি কেউ কেউ চাইছে কার্শিয়াংয়ের আদি বাসিন্দা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বন্দনা রাইকে বিজেপি প্রার্থী করুক। আবার বিজেপি চায় সর্বভারতীয় স্তরের কোনও মুখকে এখান থেকে জিতিয়ে নিয়ে যেতে। সেক্ষেত্রে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, জাতীয় নেতা তথা এক আইনজীবীর নাম প্রস্তাব করেছিল বিজেপি। পরে উত্তরাখণ্ডের সৎপালজি মহারাজকে পাঠাতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখানকার দলগুলি অনেকে চাইছে বন্দনা রাইকে। অথবা কোনও ভূমিপুত্রকে। বহিরাগতের বিপক্ষে তারা। দিল্লিতে গিয়ে পদ্মফুলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জিএনএলএফ বিজেপিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে খবর। তারা পাশে পেয়েছে বিমল গুরুংয়ের গোষ্ঠী, গোর্খা লিগ-সহ স্থানীয় দলগুলিকে। গোর্খা লিগ নেতা প্রতাপ খাতি বলেন, “আমরা বিজেপিকে সমর্থন করছি। তিন মন্ত্রীর নাম বিবেচনার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা চাই স্থানীয় বন্দনা রাইকে।”
আগেই জিএনএলএফ বৈঠকে বসেছে। তাদের তরফে বিজেপিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। জিএনএলএফ নেতা এম জি সুব্বা বলেন, আমরা চাই ভূমিপুত্র। এ নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। এখন হাতে হাত মিলিয়ে নতুন কোনও আলোর সন্ধানে বিমল গুরুং ও মন ঘিসিং। গতকালও খবর ছিল গুরুং নিজে প্রার্থী হতে চান। যদিও বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেছেন বিষয়টি পুরোপুরি ঠিক নয়, বরং গতবারের মতোই বিমল গুরুংদের সমর্থনে বিজেপির প্রতীকে কাউকে দাঁড় করানোর কথা ভাবা হয়েছিল। তবে তা চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু জিএনএলএফ এই মুহূর্তে পাহাড়ের কর্তৃত্ব ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে বিমল গুরুংয়ের হাত ধরতে চাইছে। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তাই বলে গুরুংকে প্রার্থী হিসাবে সমর্থন করা হবে না। তবে কুয়াশা ঘেরা পাহাড়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপট আগামী দু’দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। তবে পাহাড়ের দলগুলির পদক্ষেপ ঘিরে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। সিপিএমের নেতা তথা শিলিগুড়ির চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “মোর্চা এবং জিএনএলএফ একে অপরের হাত ধরলে তা হবে অত্যন্ত অপরিণত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তারপর তারা যদি বিজেপিকে সমর্থন করে তো বলার কিছু নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.