টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: সিপিএমের বড় নেতারা যতই অস্বীকার করুন না কেন, গ্রামপঞ্চায়েত স্তরে বিজেপির সঙ্গে দলের কর্মীদের যে একটা সমঝোতা হয়েছেই, তা আর চাপা থাকছে না। বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমায় একাধিক জায়গায় সিপিএম এবং বিজেপি প্রার্থীর নাম এক সঙ্গে লেখা হয়েছে। একটু ঘুরলেই চোখে পড়ছে একই প্রার্থীর নামের পাশে কাস্তে হাতুড়ির অঙ্কন শিল্পী আঁকছেন পদ্মফুল। ভোটের আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। শেষ মুহূর্তের প্রচার চলাকালীন ঢাকঢাক গুড়গুড় ঝেড়ে ফেলেছে দু’দলই। শনিবার প্রকাশ্যেই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল জুড়ে একের পর এক গ্রামে রাম-বাম দেওয়াল লিখন চলল জোরকদমে, একসঙ্গে।
[ ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে ১০ লক্ষ টাকা-সহ গ্রেপ্তার বিজেপির ৩ নেতা ]
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, “ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে ও আমাদের কালিমা লিপ্ত করতে এই দেওয়াল লিখন করা হয়েছে।” সত্যিই তাই? হাওয়া কিন্তু বলছে খাতড়া-২, রানিবাঁধ, সিমলাপাল, ফুলকুশমা, মোটগোদা, মন্ডলকুলি সহ জঙ্গলমহলের বেশ কয়েকটি এলাকায় এখন সিপিএম-বিজেপির মধ্যে সমঝোতার কথা গাঁয়ের সবাই জানে বলেই বলছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বলছে, কোথাও সোজা সমর্থন, কোথাও আবার ‘নির্দল’ প্রার্থীকে সমর্থন করে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই চলছে। উদাহরণস্বরূপ, রায়পুরের ঢেকো অঞ্চলের ১২টা আসনে প্রথমে সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করলেও পরে তাঁরা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু সিপিএমের প্রতীক না নিয়ে বেশ কিছু আসনে তারাই আবার বিজেপির প্রতীকে লড়াই করছেন। অন্যদিকে মেলেড়া অঞ্চলের ক্ষেত্রে এলাকায় নির্দলের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর। যেখানে সিপিএম এবং বিজেপির প্রতীকে কোনও প্রার্থী নেই। তবে খাতড়া-২ এ ঢাকঢাক গুড়গুড় না করে প্রকাশ্যেই রাম-বাম জোটের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী মিতালি রানি মাহাত-সহ একগুচ্ছ প্রার্থীর দেওয়াল লিখন হয়েছে। জঙ্গলমহলের অন্যত্র প্রকাশ্যে দেওয়াল লিখন না হলেও গ্রামপঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিজেপির প্রার্থী রয়েছে, সিপিএমের প্রার্থী নেই। আবার উলটাও রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় আবার বিজেপি এবং সিপিএমের প্রতীকে কোনও প্রার্থী নেই। কিন্তু নির্দলের হয়ে ভোট করছেন তাঁরা। এ রকম নজির অনেক।
[ লাঠির আঘাতে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু, অভিযোগের আঙুল ফরওয়ার্ড ব্লকের দিকে ]
তবে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলছেন, তৃণমূল, বিজেপি দু্টি দলই তাঁদের শত্রু। তাঁদের কারও সঙ্গে সমঝোতা করার প্রশ্নই নেই। বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রও কার্যত তেমনই দাবি করছেন। তাঁদের দাবি, পুরোটাই তৃণমূলের অপপ্রচার। তবে নদিয়ার গাঙপুর মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মতো সিপিএম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য যৌথ মিছিলে যোগ দিয়েছেন, এমন দেখা যায়নি। কিন্তু একাধিক দেওয়াল লিখন হয়েছে জঙ্গলমহল জুড়ে। এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরুপ খাঁ ও জেলা সভাধিপতি অরুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই জোট আগে থেকেই ছিল। ভোটে খাতড়ার দেওয়াল লিখনে ফুটে বের হচ্ছে। যা জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রাম-বাম জোট বোরখার আড়ালে কাজ করছে। ‘এবিষয়ে জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত বলছেন, ‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে নিজেদের অস্থিত্ব বজায় রাখতে যে যেখানে পেরেছে তৃণমূলকে আটকানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে নীতি বা আদর্শ খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবে না।’
ছবি- প্রতিবেদক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.