সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অতিমারী ও দুর্যোগের সময় রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে পুরুলিয়ায় ঘৃণ্য রাজনীতির অভিযোগ বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে! তাদের কোর কমিটির একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বলা হচ্ছে, “ঘর পাবে বলে প্রশাসনের ত্রাণ শিবির বা স্কুলগুলিতে বেশি করে লোক ঢুকিয়ে দাও। ফলে করোনা হবে। সরকার ফাঁসবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর এই নির্দেশে সম্মতি দেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ তথা দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। পুরুলিয়া জেলা বিজেপির কোর কমিটির এই গ্রুপের কথোপকথন স্ক্রিন শটের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তবে ভাইরাল হওয়া এই স্ক্রিন শটের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন।
বুধবার দুপুর থেকেই পুরুলিয়ায় রটে যায় ত্রাণ শিবিরে গেলেই ঘরের জন্য টাকা মিলবে। ফলে যাদের পাকা বাড়ি তাঁরাও দুর্যোগ মোকাবিলায় স্কুলের ত্রান শিবিরে আসতে শুরু করেন। এই ঘটনায় পুলিশ বরাবাজার থানা এলাকায় প্রচারে নেমে বলে, ‘এটা মিথ্যে রটনা।’ তবু কেউ শুনবেন না। তারপরই পুরুলিয়া জেলা বিজেপির কোর কমিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দলের জেলা সভাপতির এমন নির্দেশ! আর তা প্রকাশ্যে চলে আসতেই সোশ্যাল সাইট ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পুরুলিয়া জেলা বিজেপি জানিয়েছে, ভাইরাল হওয়া ওই স্ক্রিন শট ফেক।
দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “পুরোটাই ফেক। এ কাজ তৃণমূলের করা। আমি আইনত ব্যবস্থা নেব।” তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের শিক্ষা–সংস্কৃতি–তথ্য–ক্রীড়া স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু বলেন, “ওদের নোংরা রাজনীতি প্রকাশ্যে চলে আসতেই বিপাকে পড়েছেন। যা খুশি তাই বলছেন।” পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন তথা জেলা পুলিশের কাছেও ওই ভাইরাল হওয়া স্ক্রিন শট গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগণ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ওই স্ক্রিন শটের কথোপকথনে বিজেপি জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলছেন, “সব থেকে ভালো হবে বেশি করে লোক স্কুলগুলিতে ঢুকিয়ে দাও আর সবাইকে বলে দাও যে সবাই ঘর পাবে। যত বেশি লোক একসাথে থাকবে করোনা হবে আর সরকার ফাঁসবে, প্রত্যেকটি অঞ্চলে খবর দিয়ে দাও।” এই নির্দেশের পরই বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলছেন, “আপনি বলে দিন। সেন্ট্রালকে বলে আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেব। আমাদের কর্মীদেরকে বলতে হবে বেশি করে ফটো ভিডিও করে।” এই বিষয়ে সাংসদের প্রতিক্রিয়া নিতে তাঁকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বিজেপির জেলা সভাপতির ওই নির্দেশ ভাইরাল হওয়া স্ক্রিন শট অনুযায়ী সম্মতি জানান জয়পুরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন সাংসদ নরহরি মাহাতোও।
বিজেপির এই নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য। তিনি সোশাল সাইটে লিখেছেন, “এই রকম একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন স্বয়ং নির্বাচিত একজন সাংসদ! এর আগেও বারবার বিভিন্ন রকম চক্রান্ত রচিত হয়েছে, যেগুলো আমরা বুঝতে পারিনি। কিংবা হয়ত বুঝতে পারলেও আমাদের হাতে প্রমাণ ছিল না। আজ সবটা জনসমক্ষে! ভাবতেও লজ্জা করছে!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.