দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: জাঙ্গিপাড়া ও বৈদ্যবাটিতে নাবালিকা মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখল জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের এক প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কেন গিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা, তা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য। বিজেপি নেত্রীকে দেখানো হয় কালো পতাকা। বিজেপি নেত্রীকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দিতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। আর এই ক্ষোভ-বিক্ষোভে এদিন উত্তাল হয়ে ওঠে হুগলির শেওড়াফুলি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে।
দশমীর দিন জাঙ্গিপাড়া (Jangipara) শ্রীহট্ট এলাকায় বিসর্জন দেখতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় ১৩ বছরের এক নাবালিকা। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ওই নাবালিকার দেহ একটি ঝিলের পাড় থেকে উদ্ধার হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে ধর্ষণে বাধা পেয়ে খুনের অভিযোগে তিন নাবালক-সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। মৃতার পরিবারের সঙ্গে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের কেন্দ্রীয় আধিকারিক প্রিয়াঙ্ক কানুনগো কথা বলেন। কথোপকথন রেকর্ড করা হয়।
পরে বৈদ্যবাটিতে আরও এক মৃত নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। ১২ বছরের ওই নাবালিকা নবমীর দিন ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। দশমীর দিন বৈদ্যবাটিতে রেললাইনের ধার থেকে ওই নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি-সহ বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বৈদ্যবাটিতে ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়। প্রায় আধঘন্টা বিক্ষোভ দেখানোর পর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। কথাও হয়। পরে শ্রীরামপুর এসডিও অফিসে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিক প্রিয়াঙ্ক কানুনগো দু’টি বিষয় নিয়ে পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রিয়াঙ্ক কানুনগো ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, জাঙ্গিপাড়ার ঘটনার ক্ষেত্রে নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ প্রথমে পরিবারের অভিযোগ নেননি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আর পুলিশের কথায় যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। পুলিশ এই কেস সংক্রান্ত জরুরি নথি তাদের হাতে তুলে দেননি। পাশাপাশি পুলিশের চার্জগঠনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। বৈদ্যবাটির নাবালিকার দেহ রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের সময় ভিডিওগ্রাফি করা হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁর। বৈদ্যবাটির নাবালিকার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে বাধা পাওয়ার ঘটনাতেও ক্ষোভপ্রকাশ করেন ওই আধিকারিক। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের হঠাতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের মৃতের বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক দিলীপ যাদব বলেন, “কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিরপেক্ষভাবে কাজ করার কথা। তাদের কোন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া কখনই কাম্য নয়। আজকের এই ঘটনা আবার প্রমাণ করল কেন্দ্রীয় সরকার তার রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে।” তবে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল (Priyanka Tibrewal) অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, মৃতের পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্যই গিয়েছিলেন। কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে নিহতদের বাড়িতে যাননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.