জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: মুকুল রায়ের (Mulul Roy) তৃণমূলে যোগদানের পরই যে একে একে আরও অনেকেই পা বাড়াবেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল রাজ্য রাজনীতিতে। এমনকি মুকুল রায় নিজেও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের ফোন করে কথা বলেছেন বলে খবর। তারপরই বিজেপি (BJP) ছেড়ে বেরিয়ে এলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য, মুকুল অনুগামী রতন ঘোষ। রবিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে রতন বাবু জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগপত্র ইমেল করে বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। রতন বাবু বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপির কয়েকটি বিধানসভার অবজার্ভার হিসেবে কাজ করেছিলেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে আর মন টিকছিল না। তাই ‘মেন্টর’-এর পথ অনুসরণ করে দলত্যাগ করলেন।
বিজেপি ত্যাগের পর রতনবাবু নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ”দীর্ঘদিন রাজনীতি করার সুবাদে রাজনৈতিক হতাশা থেকে তৃণমূলের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলাম৷ গত ছয় মাসে বিজেপিতে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সুবাদে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান গেয়েছি। আমরা জাতপাতের রাজনীতি করি না। তাই বিজেপিতে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না।”
তৃণমূলে (TMC) কি ফিরছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রতনবাবু বলেন, ”বিজেপিতে কোনও কাজ করতে পারছিলাম না। বিধানসভা ভোটের আগেই তৃণমূলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে দলে ফেরার বার্তা পাঠিয়েছিলাম। আমি তৃণমূলে ফিরতে চাই৷ মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল আমারও। কিন্তু দলীয় কিছু নিয়মকানুনের জন্য অন্যদিন ধার্য করা হয়েছে। এই পদত্যাগের মাধ্যমে আমি তৃণমূলে যোগদানের পথে এগিয়ে গেলাম।” রতন ঘোষ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। মুকুল রায় অনুগামী বলে পরিচিত। জন্মলগ্ন থেকেই তিনি তৃণমূলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রতন ঘোষের দলত্যাগ প্রসঙ্গে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডলের বক্তব্য, ”বিজেপি সাংগঠনিক দল। যাঁরা মন থেকে বিজেপি করে, তাঁরা বিজেপি ছাড়বে না। ভোটের আগে ওঁরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিজেপিতে এসেছিলেন। ভেবেছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। এখন ওঁদের স্বার্থসিদ্ধি হবে না, তাই ফিরে যাচ্ছেন। এতে আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না।”
এদিকে, মুকুল রায় তৃণমূলে যোগদানের পর থেকে বেসুরোদের তালিকায় প্রথমেই নাম লিখিয়েছেন বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা বলেছিলেন। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপির এসসি মোর্চা সভাপতি দুলাল বর। মুকুল রায়ের হাত ধরেই তিনি বিজেপিতে এসেছিলেন। মুকুল রায় তৃণমূল ফেরার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।রবিবার দুলাল বর বলেন, ”অনেকেই বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু যোগ্য সম্মান না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আমার মতে, মুকুলদাও বিজেপিতে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। অসুবিধা হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে বাড়াতে গেলে যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.