সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উন্নয়ন অস্ত্রে শান দিয়েই সাধারণত জনসভায় অবতীর্ণ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যজুড়ে CAA-NRC বিরোধী আবহে নেমে বনগাঁর জনসভায় আজ উন্নয়নের খতিয়ানকে একটু পাশে সরিয়ে রাখলেন তিনি। বললেন, “আজ উন্নয়নের কথা বেশি বলব না। কাজ যা হয়েছে, তা সবাই দেখেছেন।” এরপরই তিনি ডুবে গেলেন মতুয়া মহাসংঘের প্রাক্তন প্রধান বীণাপানি দেবীর স্মৃতিচারণায়। মতুয়া গড়ে এসে যে আবেগে বরাবরই ভেসে যান মমতা। আর গত লোকসভায় এই বনগাঁর উদ্বাস্তু মহল্লায় দলীয় প্রার্থী তথা ঠাকুরবাড়ির বড় বউয়ের হারের পর সেখানকার জনসমর্থন টানতে এই আবেগই ভরসা তাঁর।
এরপরই তিনি সরাসরি চলে গেলেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (NRC) বিরেধিতায়। বললেন, “NRC-র প্রথম ধাপ NPR (জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধীকরণ)। তাই আমি এনপিআর-ও করতে দিইনি। এখন নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন, সংশয়ের কথা বলছে। অথচ নাগরিক না হলে ভোট দেবেন কীভাবে, আর সেই ভোটেই জিতে এল কীভাবে? এই প্রশ্নও ওঠে। মনে রাখবেন, আপনারা সকলেই নাগরিক। ভোটার কার্ড ভালভাবে তৈরি করবেন, কোনও চিন্তা করবেন না। আমরা পাশে আছি। বিপদে আমি সকলের পাশে থাকি, কিন্তু নিজেকে ‘চৌকিদার’ বলি না।”
উদ্বাস্তুদের জন্য নিজের কাজের কথাও উল্লেখ করলেন মমতা। বললেন, “উদ্বাস্তুদের নিয়ে অনেকে মিথ্যে কথা বলেন। তাঁরা জেনে রাখুন, আমিই সর্বপ্রথম উদ্বাস্তুদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। যাদবপুরে প্রথম সাংসদ হওয়ার পর আমাকে ওঁরা বলেছিলেন যে নিঃশর্ত জমির দলিল চাই। আমি তা করে দিয়েছিলাম। এখন ওঁরা সকলে জমির মালিক।” এ প্রসঙ্গে তিনি অসমের NRC প্রসঙ্গও উল্লেখ করলেন। বললেন, “আপনারা অসমে দেখেছেন, NRC-র নামে কী হয়েছে। হিন্দু নাগরিকদের সকলের নাম তালিকায় থাকবে বলে নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু দেখা গেল, বাদ যাওয়া ১৯ লক্ষে মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু বাঙালি।” আসলে, মমতা জানেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষেই অধিকাংশ মতুয়া। এটা তাঁদের দাবির মধ্যেই ছিল। সেই সমর্থনকে কিছুটা প্রতিহত করতে CAA বিরোধী আন্দোলনের মধ্যভাগে তিনি বেছে নিয়েছেন বনগাঁকে। এবং স্থানীয় বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের প্রভাব ঠিক কতখানি, তাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেন এদিন।
এদিন জামিয়া মিলিয়া, শাহিনবাগে ধারাবাহিকভাবে গুলিচালনার ঘটনা এবং যোগী আদিত্যনাথ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ‘গুলি’ নিদানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, গুলি চালাও। কেন্দ্রের মন্ত্রীদের গলায়ও একই সুর। কেন্দ্রের সরকারের উচিত, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা। তা না করে এরা গুলি চালানোর নিদান দিচ্ছেন! ছাত্র আন্দোলনের উপর অযথা হামলা হচ্ছে।” বনগাঁর স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে সভা শেষে স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়িয়ে কাঁসর-ঘণ্টা বাজালেন মমতা। তারপর চলে গেলেন রানাঘাটের সভায় যোগ দিতে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.