সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বঙ্গভঙ্গে যে বিজেপি (BJP) উসকানি দিচ্ছে, সেই ছক ফের ফাঁস হয়ে গেল। ঘনঘন বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করা গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজের সঙ্গে রবিবার শিলিগুড়িতে ‘গোপন’ বৈঠক করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল (Sunil Bansal)। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ও দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তাও। গত শুক্রবারই নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন গ্রেটার নেতা। এবার রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে অনন্ত মহারাজের (Ananta Maharaj) এই বৈঠককে ঘিরে বঙ্গভঙ্গের বিতর্ক তুঙ্গে উঠল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে (Panchayet Election) সামনে রেখে রবিবার শিলিগুড়িতে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠক শেষে সন্ধেবেলা হঠাৎই হোটেলে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন অনন্ত মহারাজ। প্রায় ৪০মিনিট বৈঠক হয় দু’জনের মধ্যে। বৈঠক শেষে অনন্ত মহারাজ বলেন, ‘‘আমার যে পৃথক রাজ্যের দাবি রয়েছে সেটাই ফাইনাল। বাকিটা বাস্তবে যখন হবে তখন দেখতে পাবেন।’’ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি বাংলা ভাগের দাবি নিয়েও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। অর্থাৎ বৈঠকে বাংলা ভাগের দাবি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনন্ত মহারাজই। তবে বৈঠক প্রসঙ্গে সুনীল বনসল এবং নিশীথ প্রামাণিকও (Nisith Pramanik) কোনও মন্তব্য করেননি। বিজেপি নেতারা এই বৈঠকের বিষয় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
অন্যদিকে, এদিনই আবার বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার একটি মন্তব্য নিয়ে রাজ্যভাগের জল্পনা আরও বেড়ে গিয়েছে। মনোজ বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ হচ্ছে চিকেন নেক। এখানে চিনের নজর রয়েছে। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে যদি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পরিকল্পনা থাকে তাহলে সুরক্ষা ক্ষেত্রে ভালই হবে।’’ উত্তরবঙ্গের আট জেলা, বিহার ও অসমের একাংশ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের জল্পনা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েই চলেছে। বিজেপির এই বঙ্গভঙ্গের ছক নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘বিজেপির পরিকল্পনা হচ্ছে উত্তরের জেলাগুলি নিয়ে বিহার ও অসমের কিছু জুড়ে আলাদা একটি রাজ্য তৈরি করা। তৃণমূল এর তীব্র বিরোধিতা করছে।’’
এদিনই বাংলা ভাগ ও অনন্ত মহারাজ ইস্যুতে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) একটি বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠকের পর অনন্ত মহারাজ দাবি করেছিলেন কোচবিহার কেন্দ্রশাসিত এলাকা ঘোষণা করা শুধু সময়ের অপেক্ষা। আবার বিমল গুরুং (Bimal Gurung) বলেন, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁরা ওদের দাবি জানাতেই পারেন। উত্তরবঙ্গে আলাদা আলাদা দাবিতে আন্দোলন করা একাধিক সংগঠন রয়েছে। কখনও কখনও পরিস্থিতি বুঝে এদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু সেটা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই। বাকিটা সময় এসব দলগুলি নিজেদের মতো আন্দোলন করে।’’ দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের জেরে ভোটের আগে জোট রাখার জন্য রাজ্যভাগ ইস্যুতে বিজেপির মদত দেওয়ার বিষয়টিই জোরাল হল বলে মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.