পলাশ পাত্র, তেহট্ট: পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল প্রকাশ হতেই স্পষ্ট রাজ্যের অন্যান্য এলাকার মতো সীমান্তবর্তী এলাকাতেও সিপিএম-এর ভোট ব্যাংকে ধস নামিয়েছে বিজেপি। নদিয়ার রাম-বাম জোট হলেও সাফল্য ঘরে তুলেছে বিজেপি। সীমান্তবর্তী তেহট্ট মহকুমার করিমপুরের একটি ব্লকের আটটি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটি দখল করেছে গেরুয়া শিবির।
[পশ্চিমবঙ্গের জন্মদিনে শ্যামাপ্রসাদের বহুমুখী চিন্তা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ]
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় থেকেই সীমান্ত এলাকায় সিপিএম-বিজেপির জোটের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। সময় যত গড়িয়েছে ততই স্পষ্ট হয়েছে রাম-বাম জোট। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে পতাকা লাগানো বা ভোটের দিন একসঙ্গে জমি কামড়ে পড়ে থাকা সবক্ষেত্রে দুইদলের কর্মী-সমর্থকদের জোটবার্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সীমান্তের করিমপুরে পিপুলবেড়িয়ায় রয়েছে সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের পৈত্রিক বাড়ি। সেই পিপূলবেড়িয়া পঞ্চায়েতে সিপিএমের প্রার্থী না দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে বিস্তর। করিমপুরের একটি ব্লকে মোট আসন সংখ্যায় তৃণমূলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপির। সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৬১, বিজেপি ৬৭। যেখানে সবচেয়ে বেশি রাম-বাম জোট প্রকাশ্যে এসেছিল সেই যমশেরপুর পঞ্চায়েতের মোল্লাহাদে ১৫৩ নম্বর বুথে শেষ পর্যন্ত সিপিএমের সুমিত্রা মণ্ডল জিতে গিয়েছেন। হোগলবেড়িয়ার মানিকনগরেও রাম-বাম জোটের ছবি প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল।
[ফল ঘোষণার দিন থেকে নিখোঁজ, অবশেষে বাড়ি ফিরলেন পঞ্চায়েতে জয়ী বিজেপি প্রার্থী]
গত পঞ্চায়েতেও নদিয়াতে ব্যাপক ফল ছিল সিপিএমের। অথচ এই পঞ্চায়েত ভোটে প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের বাড়ি পিপুলবেড়িয়ার দাঁড়েরমাঠ এলাকার তিনটি বুথে দুটি বিজেপি ও একটি নির্দল জিতে যায়। তৃণমূলের কটাক্ষ, নিজের নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ করেছে সিপিএম। করিমপুর এক ব্লকে ৬ নং জেলা পরিষদ আসনে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সমর ঘোষ মাত্র ৯৩২৬ ভোট পেয়েছেন। এখানে লড়াই হয়েছে বিজেপির সঙ্গে। জেলা পরিষদে শুধু করিমপুর এক নম্বরেই নয়, করিমপুর দুই, চাপড়া, তেহট্ট দুই, কৃষ্ণগঞ্জ বা তেহট্ট এক নম্বর ব্লকের দু-একটা আসন বাদ দিয়ে বিজেপির সঙ্গে তৃণমুলের লড়াই হয়েছে। তেহট্ট এক নম্বর ব্লকে একটি পঞ্চায়েত দখল না থাকলেও বর্তমানে তিনটি পঞ্চায়েত দখলের জায়গায় বিজেপি। এগারোটা পঞ্চায়েতে সিপিএম যেখানে ২৪ দখল করতে পেরেছে সেখানে বিজেপির আসন সংখ্যা ৬৩। চাপড়া, কৃষ্ণগঞ্জ, তেহট্ট মহকুমা মিলিয়ে সীমান্তে বিজেপির ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন পেয়েছে। সেখানে সিপিএম এই সীমান্ত এলাকায় মাত্র ছটি পেয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত চাপড়ায় মাত্র একটি আসন পেয়েছে সিপিএম। সেখানে বিজেপি ২৪টি আসন দখল করেছে। সাতটি পঞ্চায়েতের মধ্যে কৃষানগঞ্জে তৃণমূল চারটি পঞ্চায়েত ক্ষমতা দখলের পথে। বাকিগুলোতে লড়ছে বিজেপি। এখানে মাত্র ৬টি আসন পেয়েছে সিপিএম। বিজেপি পেয়েছে ২৯টি।
[পিকআপ ভ্যানে পচা মাংস ও ডিম পাচারের চেষ্টা, ধুন্ধুমার মেদিনীপুর শহরে]
রাজনীতি মহলের বক্তব্য, সিপিএমের ভোটটাই চলে গিয়েছে বিজেপিতে। রাম-বাম জোটে আখেরে লাভবান হয়েছে বিজেপি। এই জোট নিয়ে করিমপুরের এক নম্বর ব্লকের বিজেপি নেতা নিমাই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এলাকার প্রাক্তন বিজেপি ব্লক সভাপতি সমীরণ সরকার। এই বিষয়ে দলের উচ্চ-নেতৃত্বকে জানান হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নিমাই সরকার। তিনি জানান, তাঁর মদতে জোট হয়নি। নিচুস্তরে জোট হয়েছে। সুবকিছুর পরে জোটের সুফল যে বিজেপি পেয়েছে তাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.