টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া : বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। দ্বিতীয়বার দিল্লির মসনদে মোদি আসীন হওয়ায় যারপরনাই খুশি ‘ভক্তরা’। গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও গেরুয়া ঝড়। দেশের সপ্তদশ দফা নির্বাচনে বাংলার মোট ৪২ টি আসনের মধ্যে গেরুয়াদের দখলে এখন ১৮টি-ই। অপ্রত্যাশিত জয় হলেও, এই জয় যে মোদিরই, এমনটাই মত পোষণ করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
পূর্ণ মন্ত্রিত্বের দপ্তরে ঠাঁই না পেলেও বাংলা থেকে শপথ নিয়েছেন দুই হেভিওয়েট গেরুয়া শিবিরের একনিষ্ঠ সদস্য। বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরি। আর তাই প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার খুশির হাওয়া বাংলাতেও। সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজ ছিল বাঁকুড়ায়। সকাল হতেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়ে যায় মিষ্টি বিলি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েছে বই কিছু কমেনি। সূত্রের খবর, মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রায় ছ কুইন্টাল লাড্ডু বিতরণ করা হয় বৃহস্পতিবার। বিকেল গড়াতেই আতসবাজি পোড়ানোর পাশাপাশি উল্লাসে মেতে ওঠেন বিজেপি সমর্থকরা।
[আরও পড়ুন : দুর্নীতি ও তোলাবাজি বরদাস্ত নয়, সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে কড়া বার্তা মহুয়ার]
সন্ধে হলেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে টিভির সামনে বসে যান সবাই। অন্যদিকে আবার সপ্তাহ মাঝামাঝি অর্থাৎ কর্মদিবস, অফিস-কাছারি ফিরতি লোকেরা যাতে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন, তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে রাজ্যের বিজেপি সংগঠনগুলোর তরফ থেকে। গোটা বিষ্ণুপুর জুড়ে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিজেপির উদ্যোগে লাগানো হয়েছে জায়ান্ট স্ক্রিন। বড়পর্দায় মোদি এবং তাঁর মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন গেরুয়া সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষেরাও। শুধু তাই নয়, গ্রামে গ্রামে শাঁখ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে, ফুল ছড়িয়ে গোটা দেশের সঙ্গেই এই জেলাও বরণ করে নিল দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। বিষ্ণুপুর ছাড়াও, বাঁকুড়া শহরের রামপুর, ভৈরবস্থান মোড়-সহ একাধিক এলাকায় জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছিল। বাঁকুড়া থেকে বিজেপির কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাড়ি দিয়েছেন দিল্লি। সন্ধের পর শুরু হয় বিজেপির কর্মী,সমর্থকদের শব্দবাজি ফাটানো। অন্যদিকে, বাঁকুড়ার প্রবীণ বিজেপি নেতা মুরারী শর্মা এদিন প্রায় ছ কুইন্টাল মোতিচুরের লাড্ডু বানিয়ে বিলি করেছেন বাঁকুড়া শহরে।
[আরও পড়ুন : গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় পাহাড়ে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন দার্জিলিংয়ের বিধায়ক]
দীর্ঘদিন ধরেই বাঁকুড়া জেলার গেরুয়া শিবিরে তিনি খ্যাতনামা নেতা বলে পরিচিত। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদির শপথ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা সবাই।” অন্যদিকে, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল জেলার দুই শহিদ পরিবারকেও। রানিবাঁধের পুনশা গ্রামের অজিত মুর্মু আর সিমলাপালের অজিত দত্তের পরিবারকে। এই দুই পরিবার আমন্ত্রণপত্র পাওয়া সত্ত্বেও তাঁরা যোগ দিতে যাননি মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। যদিও না যাওয়ার কারণ হিসেবে অজিত মুর্মুর পরিবারের লোকজনরা দর্শিয়েছেন তাঁদের আর্থিক সমস্যাকে।
তাঁদের বক্তব্য, তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় নিজেদের গ্যাঁটের টাকা খরচা করে দিল্লি পাড়ি দিতে পারেননি তাঁরা। অজিতের স্ত্রী উর্মিলা মুর্মু বলেন, পরবর্তীতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আর্থিক সংকটের কথা জানাবেন। এই দুই শহিদ পরিবারকে আমন্ত্রণ জানালেও দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন কোনও ব্যবস্থা করলেন না দলীয় নেতার, তা নিয়ে উঠছে নানবিধ প্রশ্ন। তবে, এতকিছুর মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উৎসবের মেজাজে রয়েছেন বাঁকুড়ার বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। বাঁকুড়া পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর নীলাদ্রি দানা বলেন, ‘দলের কর্মীরা মিষ্টি বিলি করছে আমার এলাকায়।’ বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের অনুগামীরাও বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। একদা তৃণমূলের এই গড়ে লোকসভা নির্বাচনের গেরুয়া ঝড়ে ঘাসফুল যে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে, এমনটা মনে করছেন অনেকেই। বাঁকুড়ার দুই লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছেন বিজেপির দুই প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ আর সুভাষ সরকার। তারপর থেকেই তৃণমূলের ঘরে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই একাধিক পঞ্চায়েত গিয়েছে বিজেপির দখলে। শুধু তাই নয়, বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্যও যোগ দিয়েছেন পদ্ম শিবিরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.