পলাশ পাত্র, তেহট্ট: লোকসভা ভোটের খারাপ ফলাফল নিয়ে শনিবারই কালীঘাটে হতে চলেছে ময়নাতদন্ত। উপস্থিত থাকবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ থাকছেন জয়ী সাংসদ ও পরাজিত প্রার্থীরা, জেলা সভাপতি এবং পর্যবেক্ষকরা। এরই মধ্যে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে জেলা সভাপতি, মন্ত্রী ও পুরপ্রধানের এলাকায় দলের খারাপ ফল নিয়ে, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন শাসকদলের কর্মীরা। জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র, কৃষ্ণনগর পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ড। সূত্রের খবর, এই বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলের এক সদস্য ছাড়া, বাকি পাঁচ সদস্য, পুরপ্রধান অসীম সাহা এবং উপপুরপ্রধানের ওয়ার্ড-সহ ২৩টি ওয়ার্ডেই ব্যাপক ভাবে হেরেছে শাসকদল। এখানেই শেষ নয়, কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে হারে অঙ্ক নাকি আরও বড়৷ ওই কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের ৩৩০০০ ভোটের পাওয়ার রেকর্ডও এবার ভেঙে গিয়েছে। এবার কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল হেরেছে ৫৩৫৫১ ভোটে।
[ আরও পড়ুন: মেয়ের অত্যাচারে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত, নমাজ পড়া বন্ধ রেখে বৃদ্ধাকে বাঁচালেন টোটোচালক]
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার ওয়ার্ডে তৃণমূল হেরেছে দেড় হাজারেরও বেশি ভোটে। যার পিছনে স্বজনপোষণ ও পুরসভার বিরুদ্ধে শহরবাসীর দুর্নীতির অভিযোগকেই মূল কারণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা৷ তিনি জানান, মিউটেশন ফিজ ২৫০ টাকা হলেও, ডেভলপমেন্ট চার্জের নামে আরও এক শতাংশ বেশি নেয় পুরসভা৷ পুরসভার কাজে স্বচ্ছতা ছিল না। গত জানুয়ারি মাসে জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় মিটিং টোল ট্যাক্স না তোলার নির্দেশ দিলেও, তা অমান্য করে টোল ট্যাক্স তোলা চলছিল। লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে প্রকাশ্য জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা বলার পর, ট্যাক্স তোলা বন্ধ হয়। একাধিক অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে৷ প্রমোটারি-সহ বিভিন্ন লেনদেনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া৷ চাকরির নামে প্রতারণা করা ইত্যাদি একগুচ্ছ অভিযোগ নাকি রয়েছে বিভিন্ন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে৷
[ আরও পড়ুন: তৃণমূল কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে ফের উত্তপ্ত কাঁকিনাড়া, কাঠগড়ায় বিজেপি ]
দলীয় সূত্রে খবর, একমাত্র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ১১৪৫ ভোটে লিড পেয়েছে। এই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল অনুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে পুরপ্রধানের ওয়ার্ড-সহ ষোলটি ওয়ার্ডে আমাদের হার ছিল। সেই হারের পর্যালোচনা করে আমরা এগোতে পারলে আজকে এই ফলাফল হত না। এখানে আলাদা করে নয়, গোটা রাজ্যেই ধর্মীয় মেরুকরণ হয়েছে। কিন্ত এই ফল পুরসভার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের একটা বহিঃপ্রকাশ। জলুবাবুর ৩৩ হাজার ভোটের লিড ভেঙে যাবে, তা আমরা ভাবিনি।’’ দলের ভরাডুবি প্রসঙ্গে অসীম সাহা বলেন, ‘‘ধর্মীয় মেরুকরণে ভোট হয়েছে। তাই এই অবস্থা হয়েছে। নদিয়ার এগারোটা পুরসভাতেই খারাপ ফল হয়েছে।’’ পুরসভার বিরুদ্ধে ওঠা স্বজনপোষণ, দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অসীমবাবু বলেন, ‘‘যারা এই সমস্ত অভিযোগ তুলছেন, তারা কি মানুষ জানেন। তারাই সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ৷’’
জানা গিয়েছে, নদিয়ার তৃণমূল সভাপতি গৌরীশংকর দত্ত যে এলাকার বিধায়ক সেই তেহট্ট বিধানসভাতেও বিজেপির কাছে ২০৬১ ভোটে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের এলাকাতেও ৬৬৯৯ ভোটে হার হয়েছে শাসকদলের। এ প্রসঙ্গে উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘এলাকার ফল ঠিক আছে। কিন্তু আমার যে এলাকাগুলো কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের লাগোয়া রয়েছে, সেখানে হারের একটা প্রভাব পড়েছে।’’ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে স্বভাবতই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের নিচু তলার কর্মীরা। শনিবার বিকেলে তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে বৈঠকে এর রেশ পড়বে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.