রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ সিপিএম। তাই সিপিএম এবার বিজেপিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকার মানুষজন। দলীয় গাইড লাইনের বাইরে বেরিয়ে সিপিএম বিজেপিকে সমর্থন করায় রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
কাঁথি-১ ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনের মধ্যে ১৭ নম্বর আসনে প্রার্থী হয়েছেন কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তানিয়া জানা। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তানিয়া জানার বিরুদ্ধে একমুখী লড়াই শুরু হয়েছে। প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির উমা নায়ক। সিপিএম প্রার্থী দিতে না পেরে গেরুয়া শিবিরকে সমর্থন করার অভিযোগ ওঠায় নিজের দলের কাছেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব। শুধু পঞ্চায়েত সমিতি নয় গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনগুলিতেও বিজেপিকে সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। এমনকি ত্রিস্তরে তৃণমূলকে পরাস্ত করে বিজেপিকে জেতানোর জন্যে গোপনে মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে সিপিএময়ের একটি গোষ্ঠী, অভিযোগ এলাকার সিপিএম কর্মীদেরই।
[নয়া নিয়ম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্নাতক স্তরে কমল ফেল করার ‘ভয়’]
সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের দাবি, বিজেপি একটি সাম্প্রদায়িক দল তাদের সমর্থন দেওয়া যাবে না। এটাই দলের গাইড লাইন। দলের গাইড লাইন না মেনে যদি কেউ তৃণমূলকে পরাস্ত করতে বিজেপির সঙ্গে অঘোষিতভাবে জোট বাঁধে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি ও সিপিএমের অঘোষিত জোট নিয়ে শুরু হয় জোর জল্পনা। সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে বিজেপির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না করার গাইড লাইন বেঁধে দেওয়া হয়, তবে কিভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশিরভাগ আসনে সিপিএম ও বিজেপি কিভাবে হাত মিলিয়ে কাজ করছে? উঠছে প্রশ্ন। এমনকি শুধু পঞ্চায়েত সমিতির আসন বলে নয় গ্রাম পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের বেশ কিছু আসনেও কিন্তু বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিএম।
বিধানসভা নির্বাচনের পরে বাংলায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ে সিপিএম।পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সিপিএম বা বামফ্রন্টের সংগঠন তলানিতে ঠেকে যায়। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম ত্রিস্তরের সমস্ত আসনে প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়। কারণ, দলীয় কর্মীরা ইতিমধ্যে লাল পোশাক বদলে গেরুয়া পোশাক পরেছে। আপাতত কর্মী সংকটে জেরবার সিপিএম। ফলে তাদের পক্ষে জেলার সমস্ত আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলার বেশ কিছু আসনে সিপিএম সরাসরি নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেছে। কিন্তু নির্দল প্রার্থী ছাড়া বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া বিষয়টি সিপিএম কোনওভাবেই মান্যতা দেয়নি বলে দাবি জেলা সিপিএম নেতৃত্বের। কেউ যদি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তা প্রমাণ করে দিতে পারে তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও কয়েকদিন আগে বিপেজির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কাঁথিতে কর্মিসভা করতে এসে কর্মীদের দল থেকে তাড়িয়ে সিপিএম থেকে লোক এনে ভোট করে জেতার হুমকি দিয়েছিলেন। রাজ্য সভাপতির সেই হুমকিকে বাস্তব রুপ দিতে কি তবে সিপিএমের সমর্থন নিয়ে ভোটে জেতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বিজেপি? এমনই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
[‘কাঁচা বাঁশের লাঠি হাতে গ্রাম দখল আটকান’, ফের বেলাগাম দিলীপ ঘোষ]
জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী একাধিক জনসভায় সিপিএম ও বিজেপির গোপন আঁতাতের বিষয়ে সামনে এনেছেন। এবার সেই অভিযোগ আনলেন কাঁথি-১ ব্লকের-সাবাজপুট এলাকার মানুষজন। বিজেপির কাঁথি জেলার সভাপতি সোমনাথ রায় জানান, বিজেপি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যে বদ্ধ পরিকর। কারুর সহযোগিতা বা আঁতাতের প্রয়োজন নেই। সিপিএমের লোক নেই প্রার্থী দিতে পারেনি। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপি বাংলায় বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে আসছে। কারওর উপর ভর করে নয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ জানান, বিজেপি একটি ভয়ঙ্কর দল। তাকে কোনভাবেই সমর্থন করা যাবেনা বলে দলীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিচুতলায় কেউ যদি বিজেপির সঙ্গে জোট করার অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.