সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: দার্জিলিং মুখ ফিরিয়েছে৷ জনসমর্থন আদায়ে নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র বর্ধমান-দুর্গাপুর, শ্বশুরবাড়ির কেন্দ্র৷ আর ভোটের আগে সেখানে জনসংযোগ করতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়লেন বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া৷ দুর্গাপুরের আইনজীবী মহলের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মেতে উঠে তিনি ঘুচিয়ে দিলেন রাজনৈতিক ব্যবধান৷ পাড়ার জামাইয়ের সঙ্গে আড্ডায় শামিল তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরাও৷
আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুরসভার মেয়র পারিষদ নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোন মনিকার স্বামী এসএস আলুওয়ালিয়া৷ এদিন শুক্রবারের আড্ডায় ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ শোনাচ্ছিলেন তিনি৷ বলছিলেন, ‘ভিড়িঙ্গি মোড়ে বাসে করে নামতাম আমি আর মনিকা। আমি চলে যেতাম কাজে। আর মনিকা চলে যেত কলেজে। ভিড়িঙ্গি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকত কয়েকজন। তাদের ঘুষ দিতে হতো চকোলেট। যাতে কেউ না মনিকার বাড়িতে বলে দেয়।’ এখানকার কলেজেই পড়াশোনা করেছেন আলুওয়ালিয়া৷ পড়েছেন আইনও৷ আর পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরেই এদিন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ দুর্গাপুরের বারে জমে উঠল আসর৷
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির জল অনেকটা গড়িয়ে গেছে৷ তাই শুক্রবার আলুওয়ালিয়ার পুরনো বন্ধুবান্ধবদের একাংশই তাঁকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন৷ কারণ, তাঁদের গায়ে এখন রাজ্যের শাসকদলের রং৷ ভোটের স্বার্থে আলুওয়ালিকা যতই সকলকে ‘আপন’ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন, কলেজবন্ধুদের একাংশের দুরত্ব কিন্তু থেকেই গেল৷ গল্পে গল্পে জানা গেল অনেক কথাই৷ বর্তমানে দুর্গাপুরের তৃণমূল আইনজীবী সেলের সহ–সভাপতি রঞ্জিত রায় আলুওয়ালিয়ার বাল্যবন্ধু৷ জানা গেল, রঞ্জিতবাবুর বিয়েতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন আলুওয়ালিয়া৷ তাই এদিনও বন্ধুকে ডেকে নেওয়ার চেষ্টা করেন৷ বারে ঢোকার প্রায় আধঘন্টা পর বিড়ম্বনা এড়াতে তিনি নিজেই গেলেন বন্ধুর কাছে৷ তাঁকে কাছে দেখে আর দূরে থাকতে পারেননি তৃণমূলের আইনজীবী সেলের সহ-সভাপতি৷ রঞ্জিত রায়৷ শুরু হয়ে যায় দুই বন্ধুর ‘তুই তোকারি’।
যদিও বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে এমন আন্তরিক আলাপচারিতার পর তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের অনেকেই মুখ লুকোতে ব্যস্ত৷ ভিন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সঙ্গে এমন মাখামাখি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মোটেই ভাল চোখে দেখছে না৷ দেবব্রত সাঁই নামে এক আইনজীবী জানান,‘শিষ্টাচার মেনে দলে থাকতে হবে এটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশ। তবে বড়দের সম্মান জানাতেও শিখিয়েছে দল।’ এদিনের নির্ভেজাল আড্ডা নিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর মন্তব্য, ‘পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে গেলাম। তাঁদের আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা চাইলাম। পুরনো দিনের বন্ধুদের সঙ্গে জমাটি আড্ডা দিয়ে রোমাঞ্চিত হলাম। বহুদিন পর দেখা হলো। বহু স্মৃতি মনে পড়ে গেল।’ এখন রাজনীতি ভুলে আলুওয়ালিয়ার এই প্রাণখোলা আড্ডায় ভোটবাক্স কতটা পূরণ হয়, সেটাই দেখার৷
ছবি: উদয়ন গুহরায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.