তনুজিৎ দাস: উর্দু শিক্ষকের নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত বছর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুল৷ গুলিতে মৃত্যু হয় দুই ছাত্র রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মনের৷ জনতার বিক্ষোভে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায় ইসলামপুর৷ যার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে উত্তর দিনাজপুরের একাধিক জায়গায়৷ সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হন মৃত দুই ছাত্রের পরিবার৷ যদিও এখনও তাঁদের সেই দাবি পূরণ হয়নি৷ তবে কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়৷ কিন্তু নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে সেই দাড়িভিট কাণ্ডকে খুঁচিয়ে দিয়ে আরও একবার রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানালেন রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরি৷ বুঝিয়ে দিলেন রায়গঞ্জের নির্বাচনী বৈতরণী টপকাতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এটাই হতে চলেছে তাঁর মোক্ষম অস্ত্র৷
[ আরও পড়ুন: কঠিন প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে রবিবাসরীয় প্রচারে রাহুল-লকেট ]
দাড়িভিট কাণ্ডের সময় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে রাজ্য বিজেপির এই সাধারণ সম্পাদিকা বলেন, ‘দাড়িভিট কাণ্ড রাজ্য সরকারের তোষামোদের এক মারাত্মক ফলাফল৷ ওই সময় রাজ্য সরকারের যে ভূমিকা ছিল, তা ওখানকার মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে৷ তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, রাজ্য সরকার ওখানকার মানুষকে নিয়ে ঠিক কী করতে চান৷ তাই মানুষ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে৷’’ তিনি জানান, ‘‘ওই সময় তিনদিন আমি এখানে ছিলাম৷ ওঁদের পরিবারের পাশে ছিলাম৷ পরেও একাধিকবার এসেছি৷ আমাকে প্রার্থী ঘোষণার পর তাপস ও রাজেশের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে৷ ওরা ফোন করেছিল৷ আমি মানুষের মন পড়ে বুঝতে পেরেছি, এখানকার সাধারণ মানুষ বিজেপিকেই চাইছে৷’’
রাজ্যের যে কয়েকটি হেভিওয়েট আসন রয়েছে, তারমধ্যে রায়গঞ্জ অন্যতম৷ যে আসনগুলিকে কেন্দ্র করে ভেস্তে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রক্রিয়া, তাদের মধ্যেও রায়গঞ্জ উল্লেযোগ্য৷ এখানে সিপিএমের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে বিদায়ী সাংসদ মহম্মদ সেলিমকে৷ এবং কংগ্রেসের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে দীপা দাসমুন্সিকে৷ যাঁদের তুলনায় অনেকটাই অনভিজ্ঞ দেবশ্রী চৌধুরি৷ কিন্তু তাও প্রতিপক্ষকে পরোয়া করছেন না তিনি৷ স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, ‘‘মহম্মদ সেলিমই হোন বা দীপা দাসমুন্সি, তাঁরা লড়াইতে নেই৷ সিপিএম এরাজ্যে ব্রাত্য৷ কংগ্রেস কী করতে রয়েছে বা আগামীতে কী করবে, তা মানুষ বুঝতে পারছে না৷ এবং মানুষ বুঝে গিয়েছে তৃণমূল অগণতান্ত্রিক এবং খুনোখুনির রাজনীতি করছে৷ তাই বিজেপির কোনও বিকল্প নেই৷’’
[ আরও পড়ুন: শহর পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে নবদ্বীপে সমাপ্ত ঐতিহ্যবাহী ১৪ মাদল উৎসব ]
প্রতিপক্ষের খামতি ধরে ধরে এদিন সিপিএম–কংগ্রেস আক্রমণ করেন বিজেপি প্রার্থী৷ অভিযোগ করে, বিগত সময়ে যাঁরাই সাংসদ হয়েছেন উত্তর দিনাজপুরকে পিছনের দিকে নিয়ে গিয়েছে৷ কোনও উন্নয়ন হয়নি৷ বিশেষ করে রেল যোগাযোগ অনুন্নত৷ রায়গঞ্জ মানেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির স্মৃতিধন্য স্থান৷ সেকথা মাথায় রেখেই দেবশ্রী চৌধুরি অভিযোগ করেন, ‘‘চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে রায়গঞ্জ পিছিয়ে রয়েছে৷ এখানকার আগের সাংসদ দীপা দাসমুন্সি এবং তাঁর প্রয়াত স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি সাধারণ মানুষকে প্রত্যেকবার এইমসের প্রলোভন দেখিয়েছেন৷ কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয়নি৷ কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার ছিল কিন্তু তাও কাজ হয়নি৷’’ রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে দেবশ্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের তরফে পাঠানো শৌচালয়ের টাকা এখানে লুট হয়৷ তা তৃণমূলের ক্যাডাররা পায়৷’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সব কা সাথ,সবকা বিকাশ’এর স্লোগান দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করাই বিজেপির লক্ষ্য৷ এখান থেকে জয় পেলে তাই হবে৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.