স্টাফ রিপোর্টার: আড়াইশো বছর আগে পূর্বপুরুষদের কৃতকর্মে বিপাকে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী! পলাশির যুদ্ধে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন ব্রিটিশদের পক্ষে। অর্থাৎ নবাব সিরাজের বিরোধিতা করে মিরজাফরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল কৃষ্ণনগরের রাজ পরিবার। সেই পরিবারের রাজমাতা অমৃতা রায় এবার পদ্মপ্রার্থী। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পূর্বপুরুষের ব্রিটিশ ভক্তি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে গিয়ে সেই প্রার্থী অমৃতা রায় নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, পলাশির যুদ্ধে বাংলার শেষ নবাব সিরাজদৌল্লার বিরোধিতা করে লর্ড ক্লাইভ-জগৎ শেঠদের সঙ্গ দিয়েছিলেন তাঁদের রাজ পরিবার। অর্থাৎ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধে মিরজাফরদের সঙ্গেই ছিলেন অমৃতার পূর্বপুরুষ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে নিজের পরিবারের বিশ্বাসঘাতকতার কথা মুখ ফসকে স্বীকার করে ফেলেছেন কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী। আর এর পরই তৃণমূল তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়ই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে এসেছে। আসলে এটাই বিজেপির চরিত্র। দলের তরফে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ আগেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এই সিরাজের বিরোধিতা করে ব্রিটিশকে সঙ্গ দেওয়ার প্রসঙ্গটি প্রথম সামনে আনেন। এদিন কুণাল এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, “সাভারকর থেকে নাথুরাম গডসে যে বিজেপি নেতাদের আরাধ্য পুরুষ হন, তাদের প্রার্থীর পরিবার যে দেশ বিরোধিতার কাজ করবে, এর মধ্যে আর নতুনত্বের কী আছে? রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেশবিরোধী মিরজাফরদের সঙ্গ দিয়েছিলেন আর তাঁর উত্তরসূরি বাংলাবিরোধী বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। ভোটেই মানুষ এর জবাব দেবে।”
কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে ফের তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া মহুয়া মৈত্রের আতঙ্কে যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভুগছেন তা স্পষ্ট হয়ে গেল ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে ফোন করে উজ্জীবিত করার ঘটনায়। কারণ, নাম ঘোষণার পর প্রথম রাউন্ডেই প্রার্থীর গায়ে দেশবিরোধী ছাপ লেগে যাওয়ায় যথেষ্ট কোণঠাসা কৃষ্ণনগরের পদ্মশিবির। বস্তুত সেই কারণে, প্রধানমন্ত্রী ফোন করতেই তাঁর পরিবারকে পলাশির যুদ্ধে সিরাজদৌল্লার বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিজের বিপন্নতার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। যদিও অমৃতা রায় নিজের যুক্তি খাড়া করতে গিয়ে সিরাজের বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের ইঙ্গিত করেছেন। বলেছেন, “সেদিন যদি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশদের সঙ্গ না দিতেন, তাহলে নবাবদের সংস্কৃতিকে স্বীকার করে নিতে হত, পোশাক-আশাক বদলে যেত।” ব্রিটিশদের সঙ্গে নিয়ে মিরজাফর-জগৎ শেঠদের সঙ্গী করে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঢাকতে কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী যে যুক্তি দিয়েছেন, তা আসলে ধর্মান্ধতার রাজনীতি বলে তোপ তৃণমূলের। আরও সহজ করে বললে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি, যে নীতিতে এক সময়ে ইংরেজরা বিশ্বাস করত, পরে দেশজুড়ে ধর্মীয় বিভাজন করে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।
কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থীর স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে দিল, মুখে দেশভক্তির কথা বললেও পদ্মশিবিরের পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। আর সেই কারণেই নির্বাচনী চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিয়েছে, মিরজাফর-জগৎ শেঠদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অমৃতার পূর্বপুরুষ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেশের স্বাধীনতার সূর্য পলাশির আমবাগানেই অস্তমিত হতে সাহায্য করেছিল। বস্তুত এই তথ্য তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেছেন, “কৃষ্ণনগরবাসী এই দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকদের জবাব দিয়ে গতবারের চেয়ে আরও বেশি ভোটে মহুয়া মৈত্রকে জিতিয়ে সংসদে পাঠাবেন, এখনই বলে দেওয়া যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.