বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: বিজেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা আগেই ছিল। এবার সম্ভবত সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। নদিয়ার রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ডাঃ মুকুটমণি অধিকারী শেষপর্যন্ত ভোটে দাঁড়াতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
[ আরও পড়ুন: মাত্র ৪০০ টাকা ভাড়ায় মিলছে নাইন এমএম পিস্তল ]
নিয়মানুযায়ী, সরকারি হাসপাতালের কোনও ডাক্তার তাঁর চাকরিতে ইস্তফা না দিয়ে ভোটে দাঁড়াতে পারেন না। যদিও প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার একদিন পরেই মুকুটমণি অধিকারী তাঁর ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর অবধি মুকুটমণি অধিকারীর ইস্তফাপত্র গ্রাহ্য করা হয়নি। যদিও তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করে তাঁকে যাতে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, তার জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও দল চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন মুকুটমণি অধিকারী নিজেই। তবে শেষপর্যন্ত তা গ্রাহ্য হবে কিনা, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবশ্য মুকুটমণি অধিকারীর ইস্তফাপত্র গ্রাহ্য না হলে সেক্ষেত্রে বিজেপিকে রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত আশায় রয়েছেন, শেষ পর্যন্ত সমস্যা মিটে যাবে। এখনও পর্যন্ত মুকুটমণি অধিকারীও নিশ্চিত, তাঁর ইস্তফাপত্র অবশ্যই গ্রাহ্য হবে। শুক্রবার দুপুরে তিনি জানিয়েছেন, “আমি আশাবাদী শুধু নয়, আমি নিশ্চিত। এটা হবেই। কোনওভাবেই আমার ইস্তফা আটকানো যাবে না।”
[ আরও পড়ুন: পাখির চোখ বাংলা, নির্বাচনী আবহে দক্ষিণবঙ্গে দশটির বেশি জনসভা মোদির ]
অবশ্য মুকুটমণি অধিকারীর ইস্তফা গ্রাহ্য না হওয়া প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ তাপস রায় এদিন জানিয়েছেন, “না, গ্রাহ্য হয়নি।” যদিও কেন গ্রাহ্য হয়নি, সে বিষয়ে তিনি বিশেষ কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, “কারণ, আমি জানি না। সেটা রাজ্যের বিষয়।” দেরি করে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি এমনিতেই তৃণমূল ও সিপিএমের থেকে প্রচারে কিছুটা ব্যাকফুটে বিজেপি। ২৬ মার্চ ডাঃ মুকুটমণি অধিকারীর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে বিজেপি। তারপরের দিন থেকেই জোরকদমে প্রচার শুরু করে দেন মুকুটমণি অধিকারী। ইতিমধ্যেই তিনি নিজ কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি জায়গায় কর্মিসভা এবং প্রচার করে ফেলেছেন। বাদকুল্লা হাসপাতালের ডাক্তার মুকুটমণি অধিকারী অবশ্য ২৮ মার্চ তাঁর ইস্তফাপত্র হাঁসখালি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে জমা দিয়েছিলেন। যদিও বিজেপি নেতা ও কর্মীদের মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিলই, শেষপর্যন্ত মুকুটমণিবাবুর চাকরির ইস্তফা গ্রাহ্য হবে কিনা। তাঁদের সেই আশঙ্কা কি সত্যি হতে চলেছে, এমনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজ। চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। অথচ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মুকুটমণি অধিকারীর ইস্তফাপত্র গ্রাহ্য করা হয়নি বলেই সূত্রের খবর। শেষপর্যন্ত গ্রাহ্য না করা হলে মুকুটমণি অধিকারী তাঁর প্রার্থীপদে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন না।
[ আরও পড়ুন: কালো পতাকা-গো ব্যাক স্লোগান, প্রচারে বেরিয়ে অস্বস্তিতে সৌমিত্র খাঁ ]
চিকিৎসকদের মতে, “জনপরিষেবা ব্যাহত হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে এর আগে অনেক চিকিৎসকের ইস্তফা দপ্তর আটকে দিয়েছে। তবে ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণত অনুমোদন আটকানোর কথা নয়।” শুক্রবার মুকুটমণিবাবু বলেন, “এনওসি স্টেট গভর্নমেন্ট দেবে না, এটা প্রথম থেকেই খবর ছিল। তবে সরকারের সঙ্গে সেরকম কোনও বন্ড আমার ছিল না। একটা অ্যামেন্ডমেন্ট করা হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। তবে সেটা আমার অজানা। যদিও আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও পার্টি মুভ করছে। হয়ে যাবে। আজকালের মধ্যে কমপ্লিট হয়ে যাবে।” স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও চিকিৎসকের চাকরির সময়সীমা অন্তত পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রাহ্য করা হয় না। সে ক্ষেত্রে মুকুটমণি অধিকারীর চাকরির সময়সীমা খুবই কম। রাজনৈতিক কারণেই মুকুটমণি অধিকারীর ইস্তফাপত্র আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, “গত লোকসভা ভোটেই রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূল বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল। এবার তৃণমূল প্রার্থী রূপালি বিশ্বাস আরও বেশি ভোটে জিতবেন। বিজেপির অভিযোগ হাস্যকর। ভিত্তিহীন অভিযোগ।” যদিও মুকুটমণি অধিকারীর ইস্তফা শেষ পর্যন্ত গ্রাহ্য না হলে বিজেপি নেতৃত্বকে প্রার্থী বদল করা বা আইনি পথে যাওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.