কিংশুক প্রামাণিক, দার্জিলিং: পাহাড়ে আবার গোলমাল লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। অশান্তি করতে চাইছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও। তা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। পরিষ্কার বিজেপির বিরুদ্ধে নিশানা দেগে দার্জিলিংয়ের রাস্তায় নেমে সকলকে হুঁশিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, অসমে এনআরসিতে বাদ গিয়েছে গোর্খাদেরও নাম। তাই আতঙ্কে ভুগছেন বহু পাহাড়বাসী। মুখ্যমন্ত্রীকে সেকথাও জানিয়েছেন দার্জিলিং পুরসভার কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
টানা একমাস এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ সেরে এবার উত্তরবঙ্গে। আগামিকাল দার্জিলিংয়ের রাস্তায় মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন। তার আগে সকাল সকাল একেবারে রাস্তায় নেমে স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ীদের মন বোঝার কাজটা সেরে ফেললেন মমতা। সকালে বেশ খানিকটা রাস্তা হাঁটেন। শেষে পৌঁছে যান চকবাজারে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা, রাস্তার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁদের সতর্ক করে বলেন, পাহাড়ে ফের গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনৈতিক অশান্তির চেষ্টা চলছে। বাংলার মাটিতে আমরা হামলা করতে দেব না। এই রাজ্যে কোনও বিভেদ চলবে না। এনআরসি নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি আছি। এসব বরদাস্ত করা হবে না।
সম্প্রতি দিল্লির জেএনইউ ও জামিয়ে মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে হামলা হয়েছে, নিজের বক্তব্যে সে কথাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন মমতা। ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন হলে তার ফল ভাল হবে না। পাহাড়ে এর আগেও ষড়যন্ত্র করে অশান্তি করার ছক কষেছে বলে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনও আরও একবার সেই অভিযোগ সামনে আনলেন। সতর্ক করে দিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীছাত্রীদের। তার সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, সত্যি কথা বলতে কেউ পিছপা হবেন না। যা পরিস্থিতি তা নিয়ে আপনাদের দোষ নেই। আপনারা উন্নয়নের স্বার্থে রয়েছেন। তা-ই থাকবেন। কারও কোনও সমস্যা হবে না। আমি আপনাদের পাশে আছি। কোনও চিন্তা নেই।
রাজ্য বিধানসভায় সিএএ নিয়ে প্রস্তাব আনছে রাজ্য সরকার। সে কথা নিজেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভাতেও তার প্রস্তুতি চলছে। সেই প্রসঙ্গ এদিন ফের তুলে মমতা বলেন, বিধানসভায় সিএএ নিয়ে প্রস্তাব আসছে। অন্য রাজ্যগুলিকেও জানানো হবে একই অনুরোধ। একইরকম প্রস্তাবনা আনার জন্য আরজি জানানো হবে তাদের। গত কয়েকদিন ধরে পোলিও খাওয়ানোর কাজ চলছে রাজ্যে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে ক’টি বাচ্চাকে পোলিও খাইয়ে দেন। তাদের পরিচয় জেনে, তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও বোঝার চেষ্টা করেন। শেষে চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে তাদের বেশ কয়েকজনকে নিজে হাতে পোলিও খাইয়ে দেন।
এর মধ্যেই প্রস্তুতি চলছে এনআরসি বিরোধী মিছিলের। তার খবরও এদিন নিয়ে নেন তৃণমূলনেত্রী। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ প্রথম প্রতিবাদের মিছিলে হেঁটেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই থেকে চলছে টানা আন্দোলন। আগামিকাল উত্তরবঙ্গ থেকে ফের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু করতে চলেছেন মমতা। এদিনই উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্য ত্রিপুরা, মণিপুর ও মেঘালয় তাদের পৃথক রাজ্যের মর্যাদা পায়। সেই কথা উল্লেখ করে একটি টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রত্যেকটি রাজ্যের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানান। বস্তুত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকেও এনআরসি নিয়ে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে এনআরসি বা সিএএ লাগু করার ক্ষেত্রে আন্তরাজ্য সীমা বা অন্তরাষ্ট্রীয় সীমা কীভাবে সামলাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রেক্ষিতে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই টুইট তাৎপর্যপূর্ণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.