সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: মুখে সর্বদাই জাতীয়তাবাদের কথা বলেন তাঁরা৷ দেশভক্তিকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের কার্যত তুলোধোনা করেন তাঁদের দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্ব৷ কিন্তু কাজে তাঁদের উলটপুরাণ৷ অভিযোগ, এই বিজেপির কর্মীদেরই দেখা গেল জাতীয় পতাকা খুলে মাটিতে ফেলে দিতে৷ এবং সেখানে দলীয় পতাকা উড়িয়ে দিতে৷ রবিবার সকালে এমন লজ্জাজনক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন তারকেশ্বরের নাইটা মালপাহাড় পুর এলাকার বাসিন্দারা৷ যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ৷ অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা৷
[ আরও পড়ুন: আমডাঙায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামের ধাঁচে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অর্জুন সিংয়ের ]
জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ তাকেরশ্বরের নাইটা মালপাহাড় পুর অঞ্চলে বিজেপির একটি বিজয় মিছিল বের হয়৷ অভিযোগ, তখনই স্থানীয় পঞ্চায়েত ভবনের মাথায় লাগানো ভারতের তেরঙ্গা পতাকা খুলে ফেলেন বিজেপির কর্মীরা৷ সেই পতাকা মাটিতে ফেলে দেয় তারা৷ এবং ওই স্থানে টাঙিয়ে দেয় বিজেপির দলীয় পতাকা৷ স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, বিজয় মিছিলের নামে এলাকায় কার্যত ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে বিজেপি সমর্থকরা৷ সেকারণে এমন লজ্জাজনক ঘটনা চোখের সামনে দেখেও যথাযথ প্রতিবাদ করতে পারেননি তাঁরা৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে সরব হন৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগেই ওই পঞ্চায়েত ভবনটি তেরঙ্গার রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়৷ এবং পঞ্চায়েতের কর্মীরাই প্রত্যেকদিন নিয়ম করে জাতীয় পতাকা ওঠানো-নামানো করতেন৷ ফলে রবিবারের ঘটনায় তাঁদের মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের এই ঔদ্ধত্যের নিন্দা করেছে তৃণমূলও৷ শাসকদলের হুগলি জেলার আহ্বায়ক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘মুখে জাতীয়তাবাদের কথা বললেও, বিজেপি বাস্তবে তা মানে না৷ যারা জাতীয় পতাকা মাটিতে ফেলে দেয়, তারা দেশভক্ত হতে পারে না৷’’ এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি করেছেন তিনি৷ অনেকেই কটাক্ষের সুরে বলছেন, যে দলটি সর্বদাই মুখে জাতীয়তাবাদের কথা বলে, এই তাঁদের দেশভক্তির নমুনা৷
[ আরও পড়ুন: ‘ধাপে ধাপে উঠবে গ্যাসের ভরতুকি’, দিলীপের বার্তায় অশনি সংকেত দেখছেন জনতা ]
কেবল তারকেশ্বর নয়, দিকে দিকে বিজেপির বিজয় মিছিল থেকে শাসকদলের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে৷ জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া মফস্বল থানার অন্তর্গত পিডরা গ্রামে বিজেপির বিজয় মিছিলে ফাটানো শব্দবাজি থেকে আগুন লেগে যায় একটি খড়ের বাড়িতে৷ ঘটনার প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী-সহ স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক গৌতম রাজোয়ার৷ অভিযোগ, এরপরই গৌতম ও তাঁর পরিবারের উপর চড়াও হয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা৷ লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁদের৷ মাথায় আঘাত করা হয়৷ ঘটনায় জখম হয় চার মহিলা-সহ পরিবারের ছ’জন৷ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো৷ তাঁর কথায়, ‘বিজেপি যে বড় বিপদ, তা ভোটের আগেই বলেছি৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তা প্রমাণিত৷ আরও যতদিন যাবে, সাধারণ মানুষ বুঝবেন৷’ যদিও এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি বিজেপির পুরুলিয়া জেলার সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী৷
একই ভাবে বিজেপির বিজয় মিছিলকে ঘিরে উত্তপ্ত উদয়নারায়ণপুর৷ তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে। এলাকার বিধায়ক সমীর কুমার পাঁজার অভিযোগ, এদিন বিজেপির বিজয় মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় অংশগ্রহণকারীরা মদ্যপান করে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায়। সেই সময় পার্টি অফিসে তাঁদের কোনও কর্মী ছিল না। তিনি আরও জানান, সিপিএম কর্মীরা জামা পালটে গেরুয়া বসন গায়ে চড়িয়েছে৷ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে। উলটোদিকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলার সভাপতি অনুপম মল্লিক৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.