ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: কথায় আছে, ‘গোঁফ দিয়ে যায় চেনা’। কিন্তু এ তো স্রেফ পরিচয় বহনকারী গোঁফ নয়, এ যে বড় সাধের গোঁফজোড়া। বাড়িতে তাই কাঁচি প্রবেশ ‘নিষিদ্ধ’। না, করোনা আবহে ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে আতঙ্ক নয়। পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) ভাতারের বাসিন্দা দাশরথী ভট্টাচার্যর আশঙ্কা, হয়তো ঘুমের মাঝে তাঁর সাধের গোঁফে কারও ‘কুনজর’ পড়তে পারে! কেউ কেটে দিতে পারেন দীর্ঘদিন ধরে সযত্নলালিত গোঁফজোড়া (Moustache)। সহধর্মিনী কতবার হাতেপায়ে ধরে সাধাসাধি করেছেন। কিন্তু নিজের প্রাণাধিক প্রিয় গোঁফ তাঁর মুখমণ্ডল থেকে বিছিন্ন করতে পারেননি। ৩ ফুট দীর্ঘ সাধের গোঁফ নিয়ে দিব্যি খোশমেজাজে থাকেন ‘গোঁফমাস্টার’ দাশরথী ভট্টাচার্য।
পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার (Bhatar) থানার বড়বেলুন গ্রামের বাসিন্দা দাশরথী ভট্টাচার্য। বয়স ৬০। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তার উপর মুখে পেল্লাই সাইজের গুম্ফ, যার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তের দৈর্ঘ্য পাক্কা তিনফুট! গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি পৌরহিত্যের কাজও করে থাকেন দাশরথীবাবু। তাঁর এই গোঁফের কারণে এলাকায় সকলেই চেনেন ‘গোঁফমাস্টার’ নামে।
দাশরথীবাবু জানাচ্ছেন, তাঁর এই গোঁফ রাখার শখ সেই ছোটবেলা থেকেই। তাঁর কথায়, “যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন এক পুলিশকর্মীর টাঙ্গি গোঁফ দেখেছিলাম। তখন থেকেই মনে মনে ঠিক করেছিলাম, আমিও ওইরকম গোঁফ রাখব। তারপর গোঁফ গজানো শুরু হলে আর হাত দিইনি। কিন্তু দু- একবার বাধ্য হয়ে গোঁফ কাটতে হয়েছিল আত্মীয় বিয়োগের কারণে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়।” অবিবাহিত থাকাকালীন দাশরথীবাবুর এই গোঁফ নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা হাসিঠাট্টা করলেও হেসে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু একটু চাপে পড়তে হয় বিয়ের পর। ‘গোঁফমাস্টার’ বলছেন, “প্রথম প্রথম আমার স্ত্রীকে পাড়ার মহিলারা পরামর্শ দিতেন, স্বামীর অমন বেঢপ গোঁফটা কাটাতে পারো না? সেজন্য স্ত্রীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে মনোমালিন্য হত।” স্ত্রী রেণুকাদেবীর কথায়, “আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার স্বামী সাফ জানিয়ে দেন, তিনি আমাকে ছাড়বেন, তবু গোঁফ কাটবেন না।” একথা শোনার পর রেনুকাদেবী খানিকটা বাধ্য হয়েই স্বামীর শখ মেনে নিয়েছেন।
কিন্তু গোঁফজোড়া রাখতে হলে তার তো পরিচর্যা চাই। সেটাও তিনি করেন বইকী। তিন ফুটের গোঁফের পরিচর্যার জন্য দাশরথীবাবু ব্যবহার করেন সরষে ও নারকেল তেল। এর বাইরে কোনও বাজারের তেল ছোঁয়ান না। তবে এখনও দাশরথীবাবু কিছুটা আশঙ্কায় থাকেন, যদি তাঁর সহধর্মিনী কারও ‘প্ররোচনায়’ পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর গোঁফে কাঁচি চালিয়ে দেন। তাই বাড়িতে কাঁচি রাখতেই দেন না তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.