রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: বুধবার ভরদুপুরে আচমকাই শহরের বুকে লেগেছিল অকাল হোলি উৎসব। কালনা শহরের রাজপথ দিয়েই প্রায় একশো যুবক যুবতী মেতেছিলেন আবির খেলায়। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টির তালে তালে নাচছিলেন পুরুষ থেকে মহিলা সকলেই। বাজিও ফাটছিল ঘন ঘন। যেন কোনও উৎসবের শোভাযাত্রা। যা দেখতেই ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসেছিলেন কালনা শহরের বাসিন্দারা। কিন্তু স্বচক্ষে দেখতেই হতবম্ব সকলে। অবাক কাণ্ড! এ তো কোনও অনুষ্ঠানের শোভাযাত্রা নয়, কাঁধে নেওয়া শবদেহের সঙ্গেই শ্মশান যাত্রীরাই মেতে উঠেছেন অকালবসন্ত উৎসবে। সাধারণত কোনও আত্মীয় পরিজনের মৃত্যুতে কান্নাকাটি ও শোকের ছায়া থাকে পরিবারে। সেই চেনা দৃশ্যের বাইরে শোকের পরিবর্তে আনন্দ উৎসবের এমন বিরল দৃশ্য যা আগে দেখেননি কালনা শহরের বাসিন্দারা। যা নিয়েই চর্চা শহরজুড়ে।
শহরের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শোভাযাত্রাই এদিন পৌঁছায় কালনা শ্মশান ঘাটে। জানা গিয়েছে, কালনার শ্বাসপুরের দাস পরিবারের বৃদ্ধা মা রাসমণি দাসের মৃত্যুতেই এই আনন্দ উৎসব। কিন্তু কেন? পরিবারের সদস্যদের মতে, পরিবারের সব চাইতে প্রবীণ রাসমণিদেবী ১০৫ বছর বয়স পার করে নতুন বছরে পা দিয়েছিলেন। জীবনের শেষ সময়টা বিনা কোনও জটিল রোগ ভোগে ইহলোক থেকে পরলোকে গেলেন। তাঁতেই খুশি পরিবার। যার জন্যই এই সমস্ত উৎসবের মেজাজে বাড়ির সর্ব প্রবীণ মাকে শেষ বিদায় জানালেন। জানা গিয়েছে, রাসমণিদেবীর ছয় সন্তান। সেই সন্তানদের নাতিপুতি মিলিয়ে এখন ১৮ জন। তাঁর সঙ্গে বৃদ্ধার সন্তান সন্ততিরা ও আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব মিলিয়ে প্রায় একশো জন মিলে এই উৎসব শামিল হন। ওই রাসমণিদেবীর মেয়েরে ঘরের নাতি গোবিন্দ ব্যাপারি জানান, ‘বহুদিন ধরেই আমরা সকলে মিলে ঠিক করেছিলাম সুস্থভাবে দিদার মৃত্যুতে আমরা উৎসবের মতো করেই শ্মশানে যাব।’
[বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে বৃদ্ধার দেহ লোপাট!]
সেই অনুযায়ী এই দিনের আয়োজন। এদিন ভোরে ওই বৃদ্ধার ঘরেই মৃত্যু হয়। তারপরেই পরিবারের লোকজনরা আসে। টাকা খরচ করে ব্যান্ড পার্টি ডাকা হয়েছিল। বাজি ফাটানো হয়েছিল। এমনকি আবির খেলাও চলে। নাতিরা মৃতদেহ কাঁধে করে শ্বাসপুর থেকে কালনা শহর হয়ে কালনা শ্মশান ঘাটে আসেন। যা দেখতেই ভিড় জমে যায় রাস্তায়। কেউ কেউ বিষয়টি মজারছলে নিলেও কেউ কেউ আবার মৃত্যুতে উৎসব পালনের বিষয়টি অমানবিক হিসাবেই দেখছেন।
ছবি: মোহন সাহা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.