সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: জন্ম থেকেই দুমুঠো অন্নের সংস্থানে বাবাকে লড়াই করতে দেখেছে সে৷ আর ওই সংগ্রাম তাকে করে তুলেছে জেদী৷ কোনও বাধাই যেন আটকে রাখতে পারেনি৷ অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর জেদের প্রতিফলন ঘটল উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে৷ ৪৫৭ নম্বর পেয়ে অলচিকি ভাষায় প্রথম স্থান দখল করল কাঁকসার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলের ছাত্র বিশ্বনাথ মাড্ডি।
মলানদিঘির অত্যন্ত গরিব ভাগচাষীর পরিবারে জন্ম বিশ্বনাথের৷ রাজ্যে অলচিকি ভাষায় উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে প্রথম হয়েছে সে। এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিশ্বনাথের কলা বিভাগে প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৭ অর্থাৎ ৯১.৪ শতাংশ। বিশ্বনাথের বাবা বাবুরাম মাড্ডি অন্যের জমিতে ভাগচাষীর কাজ করেন। দুই ভাইও বাবাকে সাহায্য করেন। ফলে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী। ২০১২ সালে কাঁকসার রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভরতি হয়৷ সেখান থেকেই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া। স্কুলের শিক্ষকরা তো ছিলেন৷ পাশাপাশি বাইরের কয়েকজন শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছে বিশ্বনাথ৷ উচ্চমাধ্যমিকের আগে স্কুলের পরীক্ষায় কোনরকমে পাশ করে বিশ্বনাথ। একদমই ভাল ফল হয়নি। বাবা কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছে কিন্তু সে ভাল ফল করতে পারছে না, এই জেদটাই চেপে বসে বিশ্বনাথের। নিজের বিশ্বাসের উপর ভর করেই ভাল ফলের জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। টেস্টের পর আর ঘরে ফেরেনি। স্কুলেই শুরু করে স্কুলের গণ্ডি পেরনোর শেষ পরীক্ষার প্রস্তুতি। বাইরের শিক্ষকরা যা পড়াচ্ছেন তাই আবার হোস্টেলে বসে ঝালিয়ে নেওয়া ও সেই পড়াটাই দফায় দফায় লিখেই সাফল্য এসেছে বলেই জানায় বিশ্বনাথ।
উচ্চমাধ্যমিকে আশাতীত সাফল্য পেয়ে অত্যন্ত খুশি রাজ্যে অলচিকি ভাষায় প্রথম বিশ্বনাথ৷ পড়াশোনার পর বাকি সময়ে ফুটবল খেলে এবং গল্প বই পড়েই কাটে বিশ্বনাথের৷ ভবিষ্যতে আইনজীবী হতে চায় কৃতী ছাত্র। ফলাফল প্রকাশের পর স্কুল থেকেই গাড়ি পাঠিয়ে তাকে স্কুলে নিয়ে আসা হয়। প্রধান শিক্ষক গৌরব মিশ্র থেকে স্কুলের অশিক্ষক কর্মী, কাঁকসার বিডিও সুদীপ্ত ভট্টাচার্য-সহ এলাকার প্রায় সকলেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্বনাথকে৷ ফুল-মিষ্টি দিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বনাথকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে।
ছবি: উদয়ন গুহ রায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.