সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: তেলে-জলে মেশে না লোকে বলে। তবে ‘তেল-রক্ত’ মেশে কি কখনও? এর জবাব অনায়াসে ‘না’ হয়েও ‘হ্যাঁ’ হয়ে যায় দুর্গাপুরের এক ‘সে়ঞ্চুরিয়ানে’র সামনে। আর তা হয় বলেই এখনও সমাজে নতুন আলোর দিশারী হতে পারেন বিশ্বদীপের মতো কেউ কেউ। ঝকঝকে সপ্রতিভ যুবক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরি৷ পেশার সুবাদেই বিশ্বদীপ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। একডাকে সবাই চেনেন। তবে, ওই চেনা মুখের আড়ালে যে বিশ্বদীপ, তাঁকে চেনে কজন? হাফ সেঞ্চুরির বয়সেই তিনি ‘সেঞ্চুরিয়ান’ যুবক। অকাতরে বিলিয়েছেন শরীরের রক্ত। নিছক মানব সেবায়, নীরবে।
সম্প্রতি দুর্গাপুর মহকুমা ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম ‘রক্তবীর’-এর সম্মান জানায় বিশ্বদীপকে। রক্তদানের নিরিখে সেঞ্চুরির জেরেই এই সম্মান জানানো হয়েছে তাঁকে৷ বিশ্বকাপের বাজারে ব্যাট হাতে নয়, স্বেচ্ছায় রক্তদানের ব্যাটন হাতে নিয়েই রক্তদানে সে়ঞ্চুরি করেছেন দুর্গাপুরের বিশ্বদীপ রায়চৌধুরি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বদীপের কেন এত রক্তদানের প্রতি মন? উত্তর দিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান নিজেই৷
এক নিঃশ্বাসে ‘সেঞ্চুরিয়ান’ রক্তদাতা বিশ্বদীপ বললেন, ‘‘১৯৮৬ সালে বাবা কালীদাস রায়চৌধুরির শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে জটিল অস্ত্রোপচার হয়। সবেমাত্র কলেজে পড়ি তখন৷ বিপদের সময় এক বন্ধু ছাড়া পাশে কেউ ছিল না৷ ৪ ইউনিট বি-পজিটিভ রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি৷ মানিকতলা সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাংকও রক্তেন জোগান দিতে ব্যর্থ। বাবার অস্ত্রোপচার স্থগিত হয়ে রয়েছে রক্তের অভাবে। জীবনের ওই সময়েই শিখেছিলাম একজন মুমূর্ষু রোগীর কাছে একটু রক্তের কত দাম। বাবার রক্তের জন্যে সারা দু্নিয়াটা নিমেষে আঁধার হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা তোলপাড় করেও সেই রক্ত জোগাড় করতে পারিনি। তখন দেবদূতের মতো হাজির হলেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সেই কর্মীর দেওয়া রক্তেই জীবন বেঁচেছিল বাবার।’’ বিশ্বদীপ আরও বলেন, “সেদিনই ঠিক করেছিলাম মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলে শুধু শুকনো আশ্বাস নয়, শরীরের শিরা-ধমনী চুঁইয়ে নিঙড়ে দিতে হবে রক্ত।’’
নিজের সেঞ্চুরি ছুঁতে এখন আট বছর বাকি। তার আগেই ছেলের রক্তদানের সেঞ্চুরিতে রীতিমতো উজ্জীবিত বৃদ্ধ কালীদাসবাবু। বিশ্বদীপ এখন দুর্গাপুরে রক্তদানের অনুপ্রেরণা। দুর্গাপুর মহকুমা ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কবি ঘোষ বলেন,“বিশ্বদীপ আমাদের গর্ব। সংগঠনের আইকন। গোটা জেলার মানুষের কাছে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।” বিশ্বদীপের মতোই রক্তদানের নিরিখে নজির গড়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের তিনজন এবং আসানসোলের বাসিন্দা অজয় প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী ললিতা প্রসাদ। মানব সেবায় অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে উঠেছেন প্রত্যেকেই।
ছবি: উদয়ন গুহ রায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.