ভোটার কার্ড হাতে জনজাতির মহিলারা
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এখনও জঙ্গলকে কেন্দ্র করেই কাটে ওঁদের জীবন। থাকেন গুহায়। ঘুরে বেড়ান যাযাবরের মতো। আজও তির-ধনুক নিয়ে দল বেঁধে জঙ্গলে শিকারে যান তাঁরা। বুনো বিড়াল, বুনো শূকর, বনমোরগ-সহ বন্যপ্রাণি শিকার করে পুড়িয়ে খান তাঁরা। বাঁওলা (আলু জাতীয়) শাক পাতা খেয়ে দিন গুজরান হয়। কথা হচ্ছে বিরহড়(Birhor) জনজাতির।
এই প্রথমবার ওই জনজাতির সব প্রাপ্তবয়স্ককে ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত করে নজির তৈরি করল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। পুরুলিয়ার তিনটি ব্লকে তাঁদের ৩১৩ জনসংখ্যার মধ্যে ১৮-র উর্ধ্বে ১৮১ জনই এবার ভোট দেবেন।
দেশের ৭৫টি আদিম জনজাতির মধ্যে অন্যতম এই বিরহড় জনজাতি। এই জনজাতি মূলত ‘প্রোটো অস্ট্রোলয়েড’ (Proto-Australoid) জাতিভুক্ত। বাংলা ছাড়াও ঝাড়খণ্ড (Jharkhand), ওড়িশা( Odisha) , ছত্তিশগড়ে (Chhattisgarh) রয়েছে তাঁদের বাস। গোটা দেশে মোট জনসংখ্যা প্রায় হাজার দশেক। সরকারি পরিভাষায় এই জনজাতি আগে ‘প্রিমিটিভ ট্রাইব গ্রুপ’ নামে পরিচিত ছিল। এখন এই জনজাতিকে বলা হয় ‘পার্টিকুলারলি ভালনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপস’।
এই জনজাতির ১৮ বছরের ওপরের সব নাগরিককে ভোটার তালিকায় আনার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই কাজ-ই করে দেখিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন (Purulia District Administration)। পুরুলিয়ার জেলাশাসক (DM) রজত নন্দার বলেন, “কাজটা একেবারে সহজ ছিল না। এখনও জঙ্গল ঘেঁষে থাকা ওই জনজাতির মানুষজনকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। কেন ভোট দেওয়া দরকার। কেন গণতন্ত্রে শরিক হওয়া প্রয়োজন, তা বহুবার বোঝানোর পরেই আমরা সফল হয়েছি। জঙ্গল ঘেরা বসতিতে ইভিএম নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
রাজ্য সরকার পাকা বাড়ি বানিয়ে দিলেও এখনও তারা গুহায় থাকতেই ভালোবাসেন। বিরহড় জনজাতি নিয়ে কাজ করা গবেষণা করা ড. জলধর কর্মকার বলেন, “আমি ওই জনজাতির মানুষদের নিয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের বসতি এলাকায় গেলে কতবার গুহা থেকে ডেকে নিয়ে আসতে হয়েছে তার হিসাব নেই। সরকার তাঁদেরকে মূলস্রোতে টেনে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ওঁরা পাহাড়-জঙ্গলে থাকতেই তারা ভালোবাসেন। শেষে পুরুলিয়ার এই জনজাতির প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা গিয়েছে এটা অনেক বড় সাফল্য।” সেই হিসাব অনুযায়ী ৪০ বছর বয়সে এই প্রথম বুথে যাবেন বলরামপুরের বেড়ষার সুশীলা শিকারী, ২৪ বছরের সোনি শিকারীরা । তাদের কথায়, “সত্যিই খুব ভালো লাগছে। ভোট দেওয়া যে অধিকার সেটা বুঝতে পেরেছি।”
এই জেলার বলরামপুরের বেড়ষা, বাঘমুন্ডির মাদলার ভূপতিপল্লি, বাড়েরিয়া, ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের মাঠারিখামারের ডাকাই, হেঁসাহাতুর মহুলটাড়ে প্রায় নিয়মিত যাচ্ছেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। ওই ১৮১ জন যাতে বুথমুখী হন, তার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চলছে। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, এবার যদি তারা ১৮১ জনকেই বুথমুখী করতে পারেন তাহলে আক্ষরিক অর্থে বড় জয় হবে তাঁদের। এই কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিচ্ছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.