ধীমান রায়, কাটোয়া: “সিপিএম-বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দলে নিয়ে আসতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের দিক তুলে ধরে নেত্রীকে বিপুল ভোটে জেতাতে হবে”, মঙ্গলবার আউশগ্রামের কর্মী সভা থেকে একথাই বললেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। কর্মীদের নির্দেশ দিলেন সাধারণ মানুষের সমস্যা খতিয়ে দেখে তা সমাধান করার। এদিনের সভা থেকেই দিলীপ ঘোষকে ‘ছাগল’ বলে কটাক্ষ করেন অনুব্রত।
মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম (Aushgram) ১ ও ২ ব্লকে কর্মী সম্মেলন করেন অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে খোশমেজাজেই দেখা যায় বীরভূমের তৃণমূল সভাপতিকে। বিগত লোকসভা ভোটে বুথভিত্তিক ফলাফল মাথায় রেখে বুথস্তরের কর্মীদের কাউকে তিনি বললেন, “বিধানসভা নির্বাচনে ভোট বাড়াতেই হবে।” আবার কোনও বুথে বিপুল ব্যবধানে জয়ের দিকটি উল্লেখ করে সেই বুথের কর্মীকে মজার ছলে বললেন, “দেখো বাবা, আর যেন ভোট বাড়িও না। তাহলে ভোটই ক্যানসেল হয়ে যাবে।” পাশাপাশি এলাকার পরিসেবামূলক কাজকর্ম নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সতর্কও করে দেন অনুব্রত মণ্ডল।
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম বিধানসভা বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। তৃণমূল কংগ্রেসের আউশগ্রাম বিধানসভার দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু মাস দেড়েক আগে দলের রাজ্যকমিটির বৈঠকের পর পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার পরিবর্তে কয়েকটি বিধানসভা এলাকা পিছু একজন করে কোঅর্ডিনেটর রাখা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের পর দলের অভ্যন্তরে গুঞ্জন চলছিল এবার আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রাম বিধানসভা এলাকার সাংগঠনিক দায়িত্ব অনুব্রতর থাকছে না। কিন্তু দেখা গেল কেতুগ্রাম ১, কেতুগ্রাম ২ ব্লকে বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলনের পর আউশগ্রাম ১ ব্লকের কর্মীসম্মেলন করলেন অনুব্রত। এদিন আউশগ্রাম ২ ব্লকেও কর্মীসম্মেলন করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের দলের সাংগঠনিক রাশ এখনও তাঁর হাতেই।
আউশগ্রাম ২ ব্লকের অমরপুর অঞ্চলে প্রথম দিন কর্মী সম্মেলন হয়। ওই অঞ্চলের কয়েকটি বুথে বিগত লোকসভা নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেইসব বুথের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাঁদের অনুব্রত নির্দেশ দেন, “যারা বিজেপি বা সিপিএমে রয়েছে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে দলে নিয়ে আসতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে উন্নয়নের দিক তুলে ধরে নেত্রীকে বিপুল ভোটে জেতাতে হবে।” এদিন অমরপুর অঞ্চলের বিষ্ণুপুর গ্রামের ১০ নম্বর বুথের এক কমীর সঙ্গে অনুব্রতর কথোপকথনের সময় মণিরুল ইসলাম নামে ওই কর্মীকে অনুব্রত প্রশ্ন করেন, “তোমার বুথে মোট ভোটার কত?” মনিরুলের উত্তর, “৬৭৬ স্যার।” অনুব্রত আবারও জানতে চান, “লিড কত?” উত্তর, “৫২৭ স্যার।” সেইসময় মজার তৃণমূল নেতা বলেন, “আর যেন বাড়িও না বাবা। একদম বাড়িও না। তাহলে ভোট বাতিল হয়ে যাবে।” অনুব্রতর মুখে এই কথা শুনে সভায় তখন হাসির রোল।
অমরপুর অঞ্চলের একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত পাড়ার বাসিন্দারা তৃণমূল থেকে এখনও মুখ ফিরিয়ে রয়েছে বলে সভায় জানতে পারেন অনুব্রত। তিনি কারণ জানতে চাইলে এক কর্মী জানান, ওই পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জলের সমস্যা। টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়ে থাকলেও মেরামত হচ্ছে না। তখন অনুব্রত অমরপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান ইবাদত শেখকে নির্দেশের সুরে বলেন, “৭ দিনের মধ্যে ওই কলগুলি মেরামতের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমি আর কোনও অজুহাত শুনতে চাই না।” অমরপুর অঞ্চলের কর্মী সম্মেলনের পর রামনগর অঞ্চলের বারোসতী ডাঙ্গার মাঠে অনুব্রত রামনগর অঞ্চলের কর্মীদের নিয়ে বুথভিত্তিক কর্মীসম্মেলন করেন।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.