প্রতীকী ছবি
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: এক্স রে ঘরে ঢুকিয়ে আদিবাসী গৃহবধুকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় আদিবাসী সমাজে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সাহাবুল মণ্ডল নামে এক্স রে বিভাগের কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে মুরারই থানার পুলিশ। রবিবার রামপুরহাট মহকুমা আদালত তাকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ন মুখোপাধ্যায় জানান, “রামপুরহাটের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দ শিকদার ঘটনার তদন্ত করবেন।”
এদিকে, জেলা সহকারী সভাধিপতি স্বর্ণলতা সোরেন পুলিশের কাছে নার্সিংহোমে ভর্তি রোগীর নিরাপত্তা থেকে অভিযুক্তের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার সহ মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিতাভ সাহা জানান, “যে কোনও মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় মহিলা সহযোগী বা তাঁর বাড়ির লোকের উপস্থিত থাকার কথা। যদি না থাকে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” যদিও নার্সিংহোমের মালিক তথা মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি জাবের শেখ জানান, “আমি অভিযোগ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমার কাছে সাহাবুল ঘটনার কথা অস্বীকার করে।”
গত দশ বছর ধরে মুরারই ১ ব্লকের বাজারে ৫০ বেডের নার্সিংহোম চালাচ্ছেন জাবের শেখ। গত বুধবার পাইকর এলাকার একটি গ্রাম থেকে পরিবারের সঙ্গে পেটে ব্যথার জন্য চিকিৎসকের নির্দেশ মতো মুরারইয়ের নার্সিংহোমে আসেন বছর আটত্রিশের আদিবাসী বধূ। শনিবার রাতে তাঁর অপারেশন হয়। অপারেশনের আগেই নার্সিংহোমে সাহাবুলকে দেখতে পেয়ে তিনি তাঁর ভাইকে বিষয়টি জানান। আদিবাসী গৃহবধূর অভিযোগ, “এক্স রে করার নামে তাঁকে নগ্ন করে ধর্ষণ করা হয়। ঘরের সব আলো বন্ধ করে মোবাইল জ্বালিয়ে ক্ষতস্থানে মেশিন বসানোর নাম করে ধর্ষণ করা হয়েছে।” তবে দুদিন আগে ঘটনা ঘটলেও তিনি চুপ করে থাকার কারণ হিসাবে জানান, “ধর্ষণের কথা জানাজানি হলে চিকিৎসক অপারেশন করতে না পারেন, সেই আতঙ্কে বলিনি।” তবে ফের শনিবার অপারেশনের সময় সাহাবুলকে দেখেই আঁতকে ওঠেন বধূ। তখনই তিনি ধর্ষণের কথা জানান।
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩ বছর আগে পাইকরের সাহাবুল মণ্ডল এক্স রে টেকনিশিয়ানের সহকারী হিসাবে যোগ দেন। অমিতাভ সাহা জানান, “এর আগেও রামপুরহাট শহরে এক চিকিৎসকের চেম্বারে এমনই একটি ঘটনার তদন্ত করে তাদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল। লাইসেন্স দেওয়ার সময় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয় মহিলা রোগীর ক্ষেত্রে মহিলা সহকারী না থাকলে তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে কাউকে ভিতরে উপস্থিত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সেটা ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে।” যদিও মালিক জাবির শেখ বলেন, “শনিবার অপারেশনের পরেই আমি অভিযোগ পেতেই আমাদের মতো তদন্ত শুরু করি। নার্সিংহোমের মহিলা প্রতিনিধি ছিল। সে সময় মিনিট পাঁচেকের জন্য সে বাইরে গিয়েছিল। তাছাড়া বেলা সাড়ে ১১ টার সময় ছবি তুলে ওই গৃহবধূ তাঁর পরিবারের লোকের সঙ্গে হেঁটে বেরিয়ে চলে যায়। কাউকে কিছু বলেননি।” সোমবার মুরারইয়ে যাবেন আদিবাসী গাঁওতা দিশমের রবীন সোরেনরা। তিনি জানান, “রোগীর উপর আমরা এই অত্যাচার মেনে নেব না। নার্সিংহোমের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। নাহলে আমরা জমায়েতের ডাক দেব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.