নন্দন দত্ত, সিউড়ি : একদিকে হুমকি, অন্যদিকে সম্মান। নিজের জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে এমনই দাওয়াই দিলেন অনুব্রত মণ্ডল। বললেন, ‘ গ্রামে গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা গেলে তাঁদের তৃণমূল কর্মীরা স্যালুট করবেন। বাড়িতে গেলে নকুলদানা দিয়ে জল খাওয়াবেন।’ তাঁর এই মন্তব্যের পরেই নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায় বিরোধীরা। এরপরই নির্বাচন কমিশনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন৷
সোমবার বীরভূমের পুরন্দরপুরে আয়োজিত তৃণমূলের জনসভা থেকে দলীয় কর্মীদের এমনই নির্দেশ দিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পাশাপাশি জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারির ওপর যে তাঁদের কড়া নজর আছে, সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন। বলেন, ‘দরকারে আইনত ব্যবস্থা নেব। ছেড়ে কথা বলব না। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের পুরন্দরপুর। অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক জয়যাত্রার ভিত্তিভূমি। জেলার যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি তিনি শুরু করেন,কালীতলার এই মাঠ থেকে। সোমবারও দলীয় জনসভা শুরু করলেন তাঁর সেই প্রিয় মাঠ থেকেই। এদিনের জনসভা থেকে অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেন, তৃণমূলের বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায় গতবারের থেকে চারগুণ বেশি ভোটে জয়ী হবেন। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী যতই ভোটের ৪৫ দিন আগে আসুক, তাঁর জেলার মানুষ যেন তাদের দেখে ভয় না পান। তিনি বলেন, ‘কিসের ভয়? যারা এসেছে তারাও তো আমার-আপনার মতো ঘরের ছেলে।’
যদিও জেলাজুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হওয়ার পর কিছুটা হলেও শাসকদলের হুমকি ও ভয় দেখানোর ঘটনা কমেছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে এক বিজেপি কর্মীর নিজের বাড়িতে পতাকা তোলাকে কেন্দ্র করে শাসকদলের নেতারা হুমকি দেয় বলে বিজেপির অভিযোগ। তবে বিজেপির তরফে বিষয়টিতে পুলিশের অভিযোগ জানানো মাত্রই শাসকদলের নেতারা নিজেদের ভুল শুধরে নেয়।
[তৃণমূল কার্যালয়ে বিজেপি নেতাকে ‘মারধর’, শীতলকুচিতে উত্তেজনা]
এই পরিস্থিতি পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বিধানসভায় ছিল না বলেই জানাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।তাঁদের অভিযোগ, গত দশ বছরে পরপর দুটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিউড়ি দু নম্বর ব্লকে কোনও নির্বাচন হয়নি। ফলে বিনা লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে তৃণমুল প্রার্থীরা। সেকথা মাথায় রেখেই আজ অনুব্রত মণ্ডল বললেন, ‘কলকাতায় কেন্দ্রীয় বাহিনী অসভ্যতা করছে। বীরভূমে তা করতে দেব না। কোনও অন্যায় করলে আমরা তার মোকাবিলা করব। কেন্দ্রীয় বাহিনী, তুমি তো নিরপেক্ষ। কোনও দলের নও। তাহলে মোদীবাবুর এজেন্ট হয়ে কেন কাজ করবে? আমরা এ জেলায় তা করতে দেব না। আমাদের অধিকার আছে ভোট চাইবার। আমরা উন্নয়ন করেছি। তাই সেই দাবিতেই ভোট চাইব। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ তবে নির্বাচনী মরশুমে তৃণমূলের জেলা সভাপতির এমন বক্তব্য যে বিজেপি একেবারেই ভালভাবে নিচ্ছে না, তার প্রমাণ অনুব্রতর বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দায়ের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.