ছবিতে অপসারিত ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়, ছবি: বাসুদেব ঘোষ।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বীরভূমের খয়রাশোলে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি খুনের জেরে অপসারিত কাঁকড়তলা থানার ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরেই বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হন ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। সোমবার দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে কাকার মৃত্যুর খবর পেয়েই কাঁকড়তলা থানার ওসির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন ভাইপো বিশ্বজিৎ ঘোষ। তাঁর দাবি, ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় গেরুয়া বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা করে কাকাকে খুন করেছেন। এরপরেই নড়েচড়ে বসে জেলার পুলিশ প্রশাসন। রাতেই ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কাঁকড়তলা থানায় পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় বোলপুর থেকে এক পুলিশ কর্তাকে আনা হচ্ছে। তবে তাঁর নাম এখনও জানা যায়নি।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “৮ অক্টোবর থেকে কাকাকে মারার জন্য মিটিং করেছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশ যাদের আটক করেছে তারা সকলেই নিরীহ।” জানা গিয়েছে, গত ২৯ জুলাই বাবুইজোড় গার্মের এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় কাকঁড়তলা থানার ওসিকে হুমকি দিয়েছিলেন দীপকবাবু। তিনি বলেছিলেন, পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের উর্দি খুলে দেবেন। এই খুন সেই হুমকির পালটা বলেই মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, এদিন সন্ধ্যায় তার মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে খয়রাশোলে নিয়ে এলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল সমর্থকেরা। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল জানান, খয়রাশোলের ঘটনায় সন্দেহভাজন সাত জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।এই মুহূর্তে এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও যোগ পাইনি। দাদার মতই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল ভাইয়ের। ২০১৩-তে একইভাবে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর দাদা অশোক ঘোষের। ২০১৬-তেও বাইকবাহিনীর গুলির মুখে পড়েছিলেন দীপকবাবু। সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও এবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রবিবার দুপুরে একটি ফুটবল খেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ পেয়ে মোটরবাইকে কেন্দ্রগড়িয়া যাচ্ছিলেন দীপক ঘোষ। হিংলো নদীর পাশ ইটভাটার কাছে দুটি মোটরবাইকে তিন দুষ্কৃতী তাকে কাছ থেকে গুলি করে। দীপকবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে। দীপকবাবুর সঙ্গী ভোলা ঘোষ বলেন, “ওরা গুলি চালাতেই আমরা পরে যাই। আমি প্রাণের ভয়ে ছুটতে থাকি। চিৎকারে লোকজনদের ডাকি। এলাকার মানুষ ছুটে এলে হেলমেটে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এদিন ফের খুনের দায় বিজেপির ওপর চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, “পুলিশ নিজের মতো তদন্ত করুক। ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীরা এসে গুলি করেছে। তার দাবি দীপককে পাঁচটি গুলি করা হয়েছিল। লাভপুরের বিজেপির কর্মীর আত্মহত্যার ধুয়ো তুলে দীপকের মৃত্যুকে ঢাকতে চাইছে বিজেপি। তবে আমরাও ছাড়ব না।” এদিকে মৃত দীপক ঘোষের ভাইপো বিশ্বজিৎ ঘোষ অবশ্য কাকার খুনের পিছনে পুলিশের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.