ছবি: সুশান্ত পাল, ছবিতে মৃত শিক্ষকের দুই বোন
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ঘটনার দুদিন পরেও ময়ূরেশ্বররে খুন নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ। শুধু বোনদের নয়, দাদার বিয়েও কে ভেঙে দিত? ময়ূরেশ্বরের বাসিন্দা শিক্ষক বৃন্দাবন মণ্ডলের রহস্যমৃত্যুর কিনারা করতে সেই ভাংচি দেওয়া ব্যক্তির খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। ৪৮ ঘণ্টা পেরোলেও একচুল তদন্ত এগোয়নি। সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’বোনকে এর মধ্যেই কয়েক দফায় জেরা চলেছে। কখনও আলাদাভাবে, কখনও একসঙ্গে, কখনও বাবা প্রভাত মণ্ডলের সঙ্গে বসিয়ে মুখোমুখি জেরা। তবে যাই হোক না কেন, সন্দেহভাজন তিনজনের বক্তব্যের মধ্যে প্রচুর অসঙ্গতি থাকায় বিভ্রান্ত তদন্তকারী আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে ময়ূরেশ্বরের ব্রাহ্মণবহড়া গ্রামের ভাজুইতলায় নিজের ঘরেই অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে খুন হন শিক্ষক বৃন্দাবন মণ্ডল। সেখান থেকেই দু’বোনকে উদ্ধার করে পুলিশ। সিউড়ি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার কড়া পুলিশি প্রহরায় তাদের থানায় আনা হয়। যা বলার দিদি বাণেশ্বরী বলছিলেন। ছোট বোন নিশ্চুপ। গ্রামসূত্রে খবর, বেশ কয়েকবার বোনদের ও দাদার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। সব ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর শেষমুহূর্তে এক ফোনেই বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। কী কারণে ভেঙেছে, তানিয়ে কোনও আলোকপাত করতে পারেননি প্রতিবেশীরা। কেননা ওই বাড়ির কেউই তাঁদের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করতেন না। তাহলে দাদা বা বোন কেউ কি চাইত না অন্য কোথাও তাঁদের বিয়ে হোক? দু’বোনেরই দাবি, দাদার ভালবাসায় কোনও ঘাটতি ছিল না। বড়জনের সঙ্গে পিসির দেওরের একবার বিয়ের সম্বন্ধও হয়েছিল। শেষে পিসি বাধা দেন বলে অভিযোগ। আর একবার নিজেই থেকেই বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল বাণেশ্বরী।
তাহলে ছোট বোনের বিয়ে ভেঙেছে কে? এনিয়ে দু’বোন অবশ্য মুখ খোলেনি। যদিও তাদের দাবি, ঘটনার দিন রাতে দাদা তাদের খুন করার চেষ্টা করে নিজে আত্মঘাতী হয়েছে। এর উত্তরে পালটা প্রশ্ন করেছেন তদন্তকারী আধিকারিক। দাদা ঠিক কখন তাদের খুন করার চেষ্টা করেন? যদি সন্ধ্যায় হয় তাহলে ভোররাতে জানাজানির আগে তারা কী করছিল? যদি মধ্য রাতে হয় তাহলে তারা সাজানো ভাত রান্না ঘরে ফেলে রেখে খায়নি কেন? বাণেশ্বরীর দাবি, বাবা খেয়ে শুতে যাওয়ার পর তারা তিনজনে মিলে গল্প করছিল। তাহলে রান্না ঘরে সকালে রক্ত এল কোথা থেকে? সিঁড়ি দিয়ে সেই রক্ত বৃন্দাবনের ঘর পর্যন্ত গেল কী করে? যেখানে বাইরে থেকে বৃন্দাবনের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখেনি পুলিশ। যারা গভীর রাত পর্যন্ত ভাত না খেয়ে গল্প করে তাদের মধ্যে কী এমন ঘটল যে দাদা উত্তেজিত হয়ে তাদের খুন করতে গেলেন? জেরায় এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তাই যতক্ষণ না উত্তর মিলছে ততক্ষণ গ্রেপ্তারিও সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবেই ধন্দে ময়ূরেশ্বর থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.