নন্দন দত্ত, বীরভূম: বাঁকুড়ার সারেঙ্গার ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল বীরভূমের মুরারইয়ে৷ কবরেও জীবিত বছর সাতেকের শিশুকন্যা! স্বপ্নাদেশ পেয়ে কবর খুঁড়ে মৃতদেহ তুলতে গিয়ে গ্রামবাসীদের রোষের মুখে পড়লেন মৃতার মাসি-সহ দু’জন৷ শেষপর্যন্ত, গ্রামবাদীদের হাত থেকে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ৷ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি৷ তবে গ্রাম ছেড়েছেন মৃত শিশুটির পরিবার৷
[ মৃত সন্তান বেঁচে উঠবে! কবর থেকে শিশুর দেহাবশেষ তুলে আনল বাবা-মা]
বীরভূমের মুরারইয়ের কাহিনগর গ্রাম থাকেন বছর পঁয়তাল্লিশের সারিকুল শেখ৷ পেশায় তিনি লরি চালক৷ সারিকুলের লরির খালাসি কবিরুল শেখ৷ গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রায় মাসখানেক আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয় সারিকুল শেখের বছর সাতেকের মেয়ে রশ্মি খাতুন৷ মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷ দুর্ঘটনায় মৃত্যু৷ নিয়মমাফিক শিশুটির দেহের ময়নাতদন্ত করা কথা৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে তা হয়নি বলে অভিযোগ৷ কাহিনগর গ্রামে মেয়েকে সমাধিস্থ করেন সারিকুলের পরিবার৷ ওই গ্রামেই আবার রশ্মি খাতুনের মামার বাড়ি৷ দিনের অনেকটাই সময়ই মাসির কাছে থাকত সে৷
সারিকুল শেখের পরিবারের দাবি, মা ও মাসিকে স্বপাদেশ দিয়েছে রশ্মি৷ সমাধিস্থ হওয়ার পরও সে নাকি জীবিত! মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে এক কবিরাজ এনে হাজির করেন সারিকুলের লরির খালাসি কবিরুল৷ শুক্রবার দিনভর চলে ঝাঁড়-ফুক৷ গ্রামবাসী জানিয়েছেন, সন্ধ্যার দিকে ঝাঁড়-ফুককারী তান্ত্রিক বলেন, মাটিতে কান পেতে তিনি শিশুকন্যার কান্নার আওয়াজ শুনেছেন! সারিকুল শেখের মেয়ে রশ্মি বেঁচে আছে! তাকে কবর থেকে তুলে আনতে হবে৷ তান্ত্রিকের নিদান মেনে রাতেই কবর খুঁড়তে শুরু করেন সারিকুল শেখের পরিবারের লোকেরা৷ ডিজিটাল যুগে এমন কুংস্কার! মেনে নিতে পারেননি মুরারইয়ে কাহিনগর গ্রামের বাসিন্দারা৷ অবিলম্বে বুজরকি বন্ধ করার দাবি তোলেন তাঁরা৷ তবে ওই কবিরাজ নিজের বক্তব্যেও অনড় ছিলেন বলে অভিযোগ৷ আর তাতেই গ্রামবাসীরা আরও ক্ষেপে ওঠেন৷ গ্রামবাসীদের রোষের মুখে পড়েন মৃতার মাসি ও ওই কবিরাজ৷ বেধড়ক মারে ওই কবিরাজের মাথা ফেটে যায়৷ দু’জনকে আটকে রেখে খবর দেওয়া হয় মুরারই থানায়৷ রাতে আক্রান্তদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ৷
[ ভারসাম্যহীন প্রধান শিক্ষিকার জন্য বন্ধ পড়াশোনা, শিক্ষকদের স্কুলবন্দি করল গ্রামবাসীরা]
এই ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি৷ তবে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন সারিকুল শেখের পরিবারের লোকেরা৷ স্বপ্নাদেশে পেয়ে কবর খুঁড়ে যে শিশুটির মৃতদেহ তোলার চেষ্টা হয়েছিল, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রশ্মি খাতুনের মামি আশা বিবি৷ বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদালা বসু বলেন, ‘এখনও কিছু মানুষের মধ্যে কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। সচেতন করার চেষ্টা চলবে৷’
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.