নন্দন দত্ত, সিউড়ি: প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচে এবার তৈরি হয়েছে লক্ষ্মী মন্দির। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ঘোষ গ্রামে সেই মন্দিরে বুধবার পূজিতা হবেন মা লক্ষ্মী। তিনিই ঘোষদের গ্রাম্যদেবী। গ্রামে আর কারও বাড়িতে আলাদা করে লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন হয় না। ঘোষ গ্রামে যেমন একা লক্ষ্মী পূজিতা হন, তেমনই নলহাটির ভদ্রপুরের আকালী মন্দিরে মা কালীকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করেন গ্রামবাসীরা। ফলে শারদীয়া উৎসবের রেশ শেষ হতে না হতেই গ্রামে গ্রামে ধনদেবীরআরাধনায় ব্যস্ত গ্রামবাসীরা।
বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে ঘোষগ্রামের লক্ষ্মী পুজো প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো। লক্ষ্মীদেবীর স্থায়ী মন্দির আছে গ্রামে। কথিত আছে, গ্রাম্য এই অধিষ্ঠাত্রী দেবীর দারুমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন কামদেব ব্রহ্মচারী। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, তাঁদের গ্রামের দয়াল ঘোষ নামে এক কৃষক গ্রামের পূর্ব কাঁদরের পাড়ে নিজের জমিতে চাষ করছিলেন। সে সময় কাঁদরের জলে ভেসে আসে পদ্ম। ছেলের বায়না মেটাতে সেই পদ্মফুল যখন জল থেকে তুলতে যান ওই কৃষক, তখন স্বপ্নাদেশ হয়, ‘তুই যে ফুল তুলতে গিয়েছিলি সেটি আমার নিরাকার রূপ। আমি ঘোষ গ্রামের মা লক্ষ্মী। নিজের গ্রামেই আমার মূর্তি তৈরি করে আমাকে প্রতিষ্ঠা কর।’
[‘ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না’]
সরল দয়াল ভাবে সে তো মায়ের রূপ জানে না। শিল্পীও নয়। সামান্য চাষি। কী করে মায়ের মূর্তি গড়ে তার প্রতিষ্ঠা করবে। ফের স্বপ্নাদেশ আসে, সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী তোকে সাহায্য করবে। সেই নির্দেশে কোজাগরী পূর্ণিমায় নীমের কাঠ দিয়ে দারুমূর্তি তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠা হয় লক্ষ্মী মন্দিরের। মূর্তি প্রতিষ্ঠার খবর শুনে কান্দির রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সিং ওরফে লালাবাবু মায়ের মন্দির নির্মাণ করে দেন। রাজার তৈরি সেই মন্দির ভগ্নপ্রায় হয়ে গেলে এ বছরই নতুন করে তৈরি হয় মন্দির। সেবাইত তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের সেবাইত ও ভক্তদের দানে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচে নতুন লক্ষ্মী মন্দির তৈরি হয়েছে। এবার সেই মূর্তি পূজিত হবে।”
[মা লক্ষ্মীর কৃপায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে কুলটির ‘ভূতগ্রাম’-এ]
ময়ুরেশ্বরে লক্ষ্মীমন্দিরের আনুষ্ঠানিক দ্বরোঘাটন করেছেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্দির নতুন হলেও ৬৮ বছরের পুরনো দারুমূর্তিতেই পুজো হবে। সেবাইত গুরুশরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চারবছর অন্তর গঙ্গামাটির প্রলেপ দিয়ে মূর্তির অঙ্গরাগ হয়। কিন্তু এই মূর্তির নবকলেবর হয়েছিল ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে।’’ তিনি জানান, লক্ষ্মীপুজোয় ন’টি ঘট প্রতিষ্ঠা করে মহাযজ্ঞ হয়। ১০৮টি ক্ষীরের নাড়ুর নৈবেদ্য দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, শুধু কোজাগরী পূর্ণিমায় নয়, পৌষ মাসে প্রতি বৃহস্পতিবার বসে মেলা। যে মেলায় কড়ি কিনতে দূর দূরান্ত থেকে গৃহস্থরা মেলায় হাজির হন। এবার নতুন মন্দিরে পুজো দেখতে ভিড় উপচে পড়বে বলে প্রশাসন ও গ্রামবাসীদের ধারণা।
ছবি: বাসুদেব ঘোষ
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.