নন্দন দত্ত, বীরভূম: বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল। তার উপর টাকা না পেয়ে অনেকেই হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজে তো আত্মহত্যা করেইছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছেলেকেও বিষ খাইয়ে দিলেন এক ব্যক্তি। মারা গিয়েছেন ওই তরুণও। ঘটনায় দু’জন পাওনাদারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের সিউড়িতে।
[মর্মান্তিক! বিধবা ঠাকুমার প্রেমিকের গুলিতেই প্রাণ গেল সাড়ে চার বছরের নাতনির]
মৃতেরা হলেন সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী ও তাঁর ছেলে শঙ্খদীপ। সিউড়ির শহরের নুড়াই পাড়ার বাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন সিদ্ধার্থবাবু। ছেলের সংসারে থাকেন তাঁর মা দীপালী চক্রবর্তী। তিনি অবসরপ্রান্ত সরকারি কর্মচারী। জানা গিয়েছে, স্থায়ী রোজগার ছিল না সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর। ছোটখাটো কাজ করতেন তিনি। এদিকে সিদ্ধার্থবাবুর একমাত্র ছেলে শঙ্খদীপ আবার অত্যন্ত মেধাবী পড়ুয়া। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সংসার ও ছেলের পড়াশোনার খরচ সামলাতে হিমশিম খেতেন সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী। সেই সূত্রে বাজারে প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এমনই জায়গায় পৌঁছেছিল, যে শঙ্খদীপের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ওই তরুণ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর মানসিক চিকিৎসাও চলেছে কলকাতায়।
পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে দোতলার ঘরে ছেলে শঙ্খদীপের সঙ্গে টিভি দেখছিলেন সিদ্ধার্থবাবু। তখনই ওষুধের নাম করে ছেলেকে বিষ দেন তিনি। সরল বিশ্বাসে তা খেয়ে ফেলেন শঙ্খদীপ। এরপর রোজকার মতোই একতলায় ঠাকুমার কাছে শুতে চলে যায় ওই তরুণ। পরিবারের লোকেদের দাবি, কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারান শঙ্খদীপ। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরতে শুরু করে। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তাঁরা খবর পান, বিষ খেয়েছেন সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীও। তাঁকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি। বুধবার ভোরে মারা যান বাবা ও ছেলে। ঘটনায় শোকের ছায়া সিউড়ির নুড়াই পাড়ায়।
[মনুয়া কাণ্ডের ছায়া মালবাজারে, স্বামীকে খুন করে ঝুলিয়ে দিল স্ত্রী]
স্বামী ও ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর স্ত্রী। স্বামীর লেখা সুইসাইড নোটটি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, সুইসাইড নোটে তাঁর মৃত্যুর জন্য পাওনাদারদের দায়ি করে গিয়েছেন সিদ্ধার্থবাবু। নির্দিষ্টভাবে দু’জনের শাস্তির দাবি করেছেন তিনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিউড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। কিন্তু, ছেলেকে কেন বিষ খাওয়ালেন ওই ব্যক্তি? আত্মীয়দের দাবি, অতিরিক্ত ঋণের কারণে মানসিক চাপে ছিল গোটা পরিবার। সিদ্ধার্থবাবু জানতেন, যে তাঁর মৃত্যুর পর ঋণের বোঝা চাপবে একমাত্র ছেলে শঙ্খদীপের উপর। তাই ছেলেকে মেরে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
ছবি: বাসুদেব ঘোষ
[জেলায় জেলায় ঝড়-বৃষ্টির দাপটে মৃত ৫, মানিকতলায় ভেঙে পড়ল গাছ
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.