অর্ণব দাস, বারাসত: হাওড়ার বেলগাছিয়ার পর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী ছিল মধ্যমগ্রাম পুরসভার বাদু। গত শনিবারের আগুন ভয়াবহ আকার নেওয়ার পরেই পরিকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এই সংক্রান্ত বৈঠকে বায়ো-মাইনিং প্রযুক্তির কথা উঠল। এই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে শহরের জঞ্জাল অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৬, ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবর্জনা গঙ্গানগরের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটে ফেলা হয়। সেখানেই পচনশীল আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করে বিক্রির পর পুরসভার আয়ও হচ্ছে। আর অপচনশীল আবর্জনা আলাদাভাবে টেন্ডার করে বিক্রি করা হয়। ২৯ বছরের পুরোনো আরেকটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে বাদুর ঢালিপাড়ায়। সেখানে মধ্যমগ্রাম পুরসভার ২৮টির ওয়ার্ডের মধ্যে বাকি ২৫টি ওয়ার্ডের আবর্জনা ফেলা হয়। আবর্জনা থেকেই সেখানে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। শনিবার দুপুরে এই মিথেন গ্যাস থেকে কোনোভাবে আগুন ধরে তা ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার নেয়। পুলিশ ও দমকলের ৮টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়ে। তবুও আগুনের তীব্রতায় সংলগ্ন এলাকার বাড়িগুলিতে তাপ লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ৭২ ঘন্টা পরেও আবর্জনার পাহাড়ের একাধিক পকেটে আগুন ছিল।
মঙ্গলবারও সেখান থেকে ধোঁয়া বেরতে দেখেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি এখনও। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জমা জঞ্জাল নিয়ে এলাকার মানুষের সমস্যা, ক্ষোভের সমাধান করতে উদ্যোগী হয় মধ্যমগ্রাম পুরসভা। মঙ্গলবার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ট্রেজারি), কেএমডিএ’র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, মহকুমাশাসক, এসডিপিওর উপস্থিত বৈঠক করেন পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ-সহ অন্যান্য পুর আধিকারিকরা। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কেএমডিএ’র আর্থিক সাহায্যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জঞ্জালের পাহাড় কেটে আগে সমতল করা হবে। এরপর বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য এখানে ল্যান্ডফিল অর্থাৎ ওই জায়গাটুকু ভরাট করা হবে। ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ভর্তি হয়ে যাওয়ার পর বায়ো মাইনিং প্রযুক্তির সাহায্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে মাটি এবং জৈব সার তৈরি করা হবে।
পাশাপাশি ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের চারদিকের রাস্তা, আলো এবং জলের ব্যবস্থা-সহ সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিও করা হবে।
পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ বলেন, ”বুধবার থেকেই এই কাজ শুরু হয়ে যাবে। রাস্তা, জল এবং আলোর ব্যবস্থা করা হবে। সুরক্ষার জন্য চারদিকে ৮টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের কথায়, ”বায়ো মাইনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে যে মাটি পাওয়া যাবে, তা দিয়ে পুরসভার নিচু এলাকা ভরাট করা-সহ রাস্তাঘাট তৈরিতেও কাজে লাগবে। বাকি প্লাস্টিকের বর্জ্য সিমেন্ট কারখানার কাজে লাগবে। এর ফলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জমা জঞ্জাল নিয়ে এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.