Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bimal Gurung

পাহাড়ে আটকে গেল সবুজ ঝড়, গেরুয়া আবির ওড়ালেন ‘নেপথ্য’ নায়ক বিমল গুরুং

'কিং মেকারে'র ক্যারিশমা অক্ষুণ্ণ রাখলেন সেই গুরুং।

Bimal Gurung emerges as king maker in the hills
Published by: Paramita Paul
  • Posted:June 4, 2024 11:54 pm
  • Updated:June 5, 2024 12:31 am  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: সবুজ ঝড় আটকে দিয়ে পাহাড়ে স্বমহিমায় বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। জয় নিশ্চিত বুঝে মাঝপথে গণনাকেন্দ্র ছেড়ে সিংমারীতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দপ্তরের পৌঁছে ‘পাহাড়ের রাজনৈতিক গুরু’ গুরুংকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। তৃণমূলের জোট সঙ্গী ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার দখলে জিটিএ, পঞ্চায়েত এবং পুরসভা থাকলেও ফলাফলে ভিন্ন ছবি। এমনকি ভূমিপুত্র ইস্যুতেও সায় দিল না পাহাড়। ভোট গণনার প্রতি রাউন্ডে পাহাড়ে গেরুয়া শিবিরকে এগিয়ে রেখে ‘কিং মেকারে’র ক্যারিশমা অক্ষুণ্ণ রাখলেন সেই গুরুং।

রাজ্য জুড়ে যখন সবুজ সুনামি কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশ জুড়ে তখন অন্য ছবি। গেরুয়া দমকা বাতাস। আরও অদ্ভুত বিষয় ২০০৯ থেকে ২০২৪ দেড় দশক দার্জিলিং লোকসভা আসন পদ্ম শিবির দখলে রাখতে সফল হলেও মঙ্গলবার পাহাড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির উচ্ছ্বাস নজর কাড়েনি। বরং এক একটি রাউন্ডে বিজেপি প্রার্থী যত ব্যবধান বাড়িয়েছেন দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়জুড়ে ‘বিমল গুরুং জিন্দাবাদ’, ‘গোর্খাল্যান্ড জিন্দাবাদ’ স্লোগান ততই তীব্র হয়েছে। মিছিল, বাইক র‍্যালিতে উত্তাল হয়েছে রাজপথ। যারা মিছিলে, বাইক র‍্যালিতে ছিলেন তাদের হাতে গেরুয়া পদ্ম প্রতীকের পতাকাও দেখা মেলেনি। তারা রাস্তায় নেমেছেন কোথাও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। আবার কোথাও জিএনএলএফ-এর দলীয় ঝান্ডা নিয়ে। কেন পাহাড়ে ‘বিজেপি জিন্দাবাদ’, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নেই ভালো জানেন বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। তাই অষ্টম রাউন্ডে পাহাড়ে ১৭ হাজার ১৩৯ ভোটের লিড দেখে জয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে তিনি গণনা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে সটান সিংমারীতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দপ্তরে পৌঁছে যান। তখনও তাঁকে ঘিরে পাহাড়ের হাজার জনতার ছিলো একই স্লোগান ‘বিমল গুরুং জিন্দাবাদ’। মোটেও বিব্রত না হয়ে হাসি মুখে রাজু মোর্চার দপ্তরে ঢোকেন। সেখানে তাকে খাদা পরিয়ে প্রথম সংবর্ধনা জানান পাহাড়ের ‘কিং মেকার’ বিমল গুরুং। এর পর অন্যরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: রামমন্দির বা পিওকে দখলের ‘গ্যারান্টি’, তবু কেন অস্তমিত মোদি-সূর্য?

মঙ্গলবার চুম্বকে পাহাড়ের এই ছবি থেকে স্পষ্ট সেখানে জয় আদতে কার! পাহাড়ে বিজেপি যে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং জিএনএলএফের পিঠে সওয়ার হয়ে দেড় দশক থেকে টিকে আছে সেটাও জানান দিয়েছে এদিনের অনেক টুকরো ছবি। রাজনৈতিক মহলের মতে, সবুজ ঝড় আটকে দিয়ে পাহাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় বিজেপি প্রার্থীর ব্যবধান বাড়িয়ে একদিকে যেমন বিরাট স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন বিমল গুরুং। অন্যদিকে খাদের কিনার থেকে ফের স্বমহিমায় ফিরলেন। কারণ, এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা তৃণমূল নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী অনীত থাপা এবং তার দল। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন অনীত বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী দিলে সম্ভবত গুরুংয়ের মুখে আজকের শেষ জয়ের হাসি থাকত কিনা সন্দেহ আছে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কৌশলী চাল খেলে সহজে কিস্তি মাত করলেন গুরুং। কি সেই কৌশলী চাল?

পাহাড় ও সমতলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন অনীত থাপার প্রত্যেশা ছিল উন্নয়ন শেষ কথা বলবে। তার ঘনিষ্ঠ গোপাল লামাকে তৃণমূল প্রার্থী করে রাজ্য সরকারের পাশে থেকে তিনি ভোট প্রচারে পাহাড়ে উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু বুঝতে পারেননি গুরুং তলেতলে ২০১৭ সালে একশো দিনের সহিংস আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এগারোজনের মৃত্যু, গুরুংয়ের ভাষায় ‘আত্মবলিদানের’ আবেগ চাগিয়ে তুলবেন। সেই হিংসাত্মক আন্দোলনের সময় থেকে কার্যত তৃণমূল পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বভাবতই ওই আবেগের সামনে ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থীর ইস্যু ফিকে হয়ে যায়। পাশাপাশি আরও একটি প্রচারের তীব্রতা পাহাড়ে ছিল। জিএনএলএফ প্রতিটি সভায় বুঝিয়েছে লোকসভা ভোট দিল্লির। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ক্ষমতা রাজ্যের নেই। তৃণমূল জিতলেও দিল্লিতে সরকার গঠন করতে পারবে না। করবে বিজেপি। সুতরাং তাঁকে জেতানোই শ্রেয়। শিলিগুড়ির কাওয়াখালি সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবার রাজনৈতিক সমাধান বিবেচনা করা হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অডিও বার্তায় গোর্খারা ন্যায্য বিচার পাবেন বলে যে আশ্বাস দেন সেটার প্রচার ছিল মারাত্মক। কার্যত পাহাড়বাসী যে গুরুংয়ের আবেগঘন বক্তব্য এবং জিএনএলএফের দাবি, প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে কতটা প্রভাবিত হয়েছে সেটা ভোটের অঙ্কে স্পষ্ট। তাই তৃণমূলের জোট সঙ্গী ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার দখলে জিটিএ, পঞ্চায়েত এবং পুরসভা থাকলেও ফলাফলে ভিন্ন ছবি ধরা দিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের বিশ্বাস। পাহাড় বিজেপির সভাপতি সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান সেটা অস্বীকার করছেন না। তিনি বলেন, “পাহাড়বাসী জানে তাদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা একমাত্র দিল্লির আছে। তাই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।”

[আরও পড়ুন: ভাঙল না মিথ, গণনার মাঝেই হার স্বীকার বিজেপি প্রার্থীর, রায়বরেলিতে জয় গান্ধীদের তৃতীয় প্রজন্মের

এবার পাহাড়ে বিজেপির পথের কাটা ছিল অনেক। তাদের মধ্যে অন্যতম কার্শিয়াংয়ের বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা অন্যতম। তিনিই নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে থেকে রাজু বিস্তার বিরোধিতা করে ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবিতে সরব ছিলেন। এবং দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন। পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের দাবি, গুরুং দিল্লিতে দরবার করে চেয়েছিলেন তাই প্রার্থী পরিবর্তনের পরম্পরা ভেঙে, দলের আভ্যন্তরীণ ক্ষোভ উপেক্ষা করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজু বিস্তাকে টিকিট দেন। কেন ঘরে-বাইরে বিরোধিতা দেখেও গুরুং রাজু বিস্তাতেই ভরসা রেখেছেন? পাহাড়ের বিভিন্ন মহলে যে কথাটি বেশ চালু রয়েছে সেটা হলো রাজু বিস্তা মানেই বিমল গুরুং। যে কারণে রাজু বিস্তাও প্রকাশ্যে গুরুংকে রাজনৈতিক গুরু দাবি করেছেন। ঘনিষ্ঠতার সুবাদে গুরুং চালকের আসনে থাকতে রাজুকে চেয়েছেন। বাদবাকি যে বিরোধিতা ছিল তিনি জানতেন জাতিসত্তা ও গোর্খাল্যান্ডের আবেগের সামনে কিছুই টিকবে না। অজয় এডওয়ার্ডের সমর্থন থাকলেও কংগ্রেস-বাম প্রার্থী মুনীশ তামাং মোটেও ফ্যাক্টর হবেন না। তবে ভোটের ব্যবধান যে ২০১৯ সালের মতো থাকবে না, কমবে সেটা টের পেয়ে চানক্যের স্টাইলে গুরুং আগাম জানিয়ে রেখেছিলেন। সেটাই হয়েছে। এদিন অবশ্য গুরুং কথা বলতে চাননি। বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা দাবি করেছেন, তার জয় পাহাড়বাসীর। এখানেও ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবেই তিনি বিজেপির জয় দাবি করতে পারেননি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement