ফাইল ছবি
ধীমান রায়, কাটোয়া: বীরভূমে দলের বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি এলাকার রাস্তার বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) মুখের ওপর বলেছিলেন “সিপিএমের আমলে আমাদের রাস্তার অবস্থা এর চেয়ে ভাল ছিল।” তার জেরে ওই নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অনুব্রত। এবার পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামে স্থানীয় এলাকায় সরকারি আবাস যোজনা এবং জবকার্ড নিয়ে বহু সাধারণ মানুষদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অনুব্রতর কাছে সরাসরি নালিশ জানালেন বুথস্তরের কর্মীরা। এই অভিযোগের কথা শুনে অনুব্রত সরাসরি মঞ্চ থেকেই বিডিওকে ফোন করেন বীরভূমের জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বে। জানতে চান, “কেন গরিব সাধারণ মানুষদের হয়রানির শিকার হতে হবে?”
পূর্ব বর্ধমান জেলার জঙ্গলমহল বলে পরিচিত আউশগ্রামে রবিবার দলের বুথভিত্তিক কর্মীসভা করেন অনুব্রত মণ্ডল। আর এই কর্মী সম্মেলনে দলের বুথস্তরের কর্মীরা তাঁর কাছে পেশ করলেন একাধিক অভিযোগ। কোথাও সরকারি আবাস যোজনার বাড়ির অনুদান আটকে রয়েছে মাসের পর মাস। কোথাও গ্রামবাসীদের জবকার্ড বাতিল হয়ে গিয়েছে। আবার কারও মুখ থেকে উঠে এল স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতিই ক্ষোভের কথা। অনুব্রত মণ্ডল সমস্ত খুঁটিনাটি অভিযোগের কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শোনেন। প্রতিকারের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি, দলের কর্মীদের প্রতি তাঁর কড়া নির্দেশ “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের দিকগুলি সাধারণ মানুষদের কাছে তুলে ধরে বিধানসভা ভোটে লিড বাড়াতে হবে। যারা এখনও বিজেপি বা সিপিএমের প্রতি ঝুঁকে রয়েছে তাদের বুঝিয়ে দলে আনতে হবে।”
এদিন মূলত আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের বেরেণ্ডা, উক্তা এবং আউশগ্রাম এই তিন অঞ্চল নিয়ে বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। অনুব্রতর সঙ্গে এসেছিলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অসিত মাল। ছিলেন বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার ও ব্লক সভাপতি শেখ সালেক রহমান। দলীয় বুথ সভাপতি থেকে বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন অনুব্রত মণ্ডল। এই কথোপকথনের সময় দেখা যায় বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের কথা। বেরেণ্ডা অঞ্চলের বেলুটি গ্রামে একটি বুথে গত লোকসভা ভোটে দলের পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে ওই এলাকার এক কর্মী অভিযোগ তোলেন, “বেশকিছু মানুষের সরকারি আবাস যোজনার অনুদান মাঝপথে আটকে রয়েছে। বেশকিছু মানুষের জবকার্ড বাতিল হয়ে রয়েছে। বারবার প্রধান ও অঞ্চল সভাপতিকে বলেছি। মানুষ আমাদের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন।”
একথা শুনে অনুব্রত তৎক্ষণাৎ স্থানীয় বিধায়ক ও দলের ব্লক সভাপতির কাছে কৈফিয়ত চান। তারপরই নিজেই আউশগ্রাম ১ বিডিও চিত্তজিৎ বসুকে ফোন করেন অনুব্রত। বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডারকে বলেন, “রকেট তুই বিডিওর সঙ্গে দেখা করে সমস্যা সমাধান করে দিবি।” বেরেণ্ডা অঞ্চলের পর উক্তা অঞ্চলের কর্মীদের নিয়ে সভা করেন অনুব্রত। উক্তা অঞ্চলের ডাঙাল গ্রামের আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দারা তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছে সেকথা অনুব্রত মণ্ডলের কাছে স্বীকার করেন ওই এলাকার দলের বুথ সভাপতি। সরকারের এত উন্নয়নের পরও কেন আদিবাসীপাড়ার মানুষরা দল থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন জানতে চান অনুব্রত মণ্ডল। তিনি মঞ্চ থেকে অঞ্চল সভাপতি ও বুথ সভাপতিকে নির্দেশ দেন মানুষকে বোঝাতে হবে। বারবার তাদের বাড়িতে যেতে হবে। এদিন কর্মীসম্মেলনে দলের কয়েকজন কর্মী অভিযোগ তোলেন বিজেপির সঙ্গে ঝামেলা বা সংঘর্ষের মতন ঘটনায় পুলিশের ভয়ে তাঁদেরই মাঠে রাত কাটাতে হচ্ছে। অথচ তাঁরা দলের স্থায়ীয় নেতৃত্বের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। অনুব্রত তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ” এরকম সমস্যা হলে তোমরা আমাকে সরাসরি ফোন করবে। আমি দেখে নেবো।”
সম্মেলন শেষ বিভিন্ন দল থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দান করে। দলীয় পতাকা তুলে দেন অনুব্রত মণ্ডল। পাশাপাশি এদিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ‘অশিক্ষিত’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, কোভিড যুদ্ধে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি লড়াই করছে পুলিশ। আর সেই পুলিশকে অপমান করছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.