সুব্রত বিশ্বাস: বয়স মাত্র ষোলো। কিশোরী মনে শুধুই প্রেম। তবে এই টান গোলকবাসী কৃষ্ণের প্রতি। আবাল্যের আর এক সহচরী, তারও একই দশা। সেও প্রেমে পাগল। এর প্রেমিক অবশ্য ভিন্ন, শ্মশানবাসী মহাদেব! আর সেই আধ্যাত্মিক প্রেমেই ঘর ছাড়ল দু’জন! অবাক হওয়ার মতোই ঘটনা।
দ্বিমুখী চিন্তন। তবে ইহ-মন একাত্ম। তাই পড়াশোনোয় মন নেই। ‘পাগল তোর লাগিরে’। বাড়ির লোকজনের নাপসন্দ। মন যার উচাটন, তারে বাঁধিবে কী ডোরে? দু’জনে শেষমেশ ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দু’জনেই প্রেমিকের দোরে ঘুরবে। ঠিক হয়, প্রথমে নবদ্বীপের মন্দিরে-মন্দিরে কানহার সন্ধান ও মন সমর্পণ করে সময় কাটানো হবে। পরে ফিরে আসবে আদিযোগী শিবের দ্বারে। তবে মোক্ষম সময় শিবরাত্রিটা কাটাবে তারকেশ্বরে। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ।
গত রবিবার বিকেলে ঘর ছাড়ে দু’জনেই। ভাটপাড়া এলাকার বাড়ি ছেড়ে দু’জনে দেখা করে নৈহাটি এলাকায়। এরপর ব্যান্ডেল পৌঁছায় তারা। সেখান থেকে পরের দিন নবদ্বীপে ধামে। গৌড়ীয় মিশন থেকে সোনার গৌরাঙ্গ, খেয়া ঘাট। ঠিক যেন মীরার পাগলপনা গিরিধারীর জন্য। দিন চারেক কেটে যায় এভাবেই। এদিকে সর্বত্যাগী শিবের মিলন ও জন্মদিন শিবরাত্রি এসে পড়ে। তাই অধীরতা বাড়তে থাকে অন্য বান্ধবীর। শেষপর্যন্ত নবদ্বীপ ছাড়ে দু’জন।
বৃহস্পতিবার হাওড়া আসে দু’জনেই। ইচ্ছা ছিল পরের দিন তারকেশ্বর যাওয়ার। ততক্ষণে বাড়ির লোকজন হন্যে হয়ে খুঁজছে দু’জনকেই। ভাটপাড়া থানাও বিররণ দিয়ে চারদিকে মেসেজ পাঠায়। বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়া ১০, ১১ নম্বর গেটে দুই কিশারীকে দেখতে পায় আরপিএফ। সন্দেহ তীব্র হয়। মেসেজের বিবরণের সঙ্গে মিল পাওয়ায় দু’জনকেই ধরে আনে মহিলা আরপিএফ। একজনের নাম রঞ্জিতা নাথ, অন্যজন শর্মিলা দাস। আরপিএফকে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তারা জানায়, প্রথমে নবদ্বীপ গিয়েছিল। সেখানেই ছিল এই ক’দিন। উদ্দেশ্য ছিল দেবদর্শন বলে তারা জানায়। আরপিএফ মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে খবর দেয় বাড়ির লোকজনকে। তারাই এসে মেয়েদের নিয়ে যান। সঙ্গে আসেন ভাটপাড়ার পুলিশকর্তারাও। পরিবারের লোকজন আরপিএফকে জানায়, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে মনোমালিন্যর জেরেই তারা বাড়ি ছাড়ে। মেয়েদের ফিরে পাওয়ায় স্বস্তিতে অভিভাবকরা। রাতেই ভাটপাড়ার বাড়িতে ফিরে যান সকলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.