রঞ্জন মহাপাত্র ও সুমিত বিশ্বাস: নেই কাজ। অথচ সংসার চালাতে প্রয়োজন টাকার। তাই বাধ্য হয়ে কাজের খোঁজে উত্তরাখণ্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের (Mahishadal) লক্ষ্যা গ্রামের আট যুবক। চারজন বাড়ি ফিরেছেন সদ্যই। তবে বিপর্যয়ের পর থেকে নিখোঁজ আরও চার যুবক। তাঁদের ফেরার অপেক্ষায় গোটা গ্রাম।
দিনটা ছিল রবিবার। ছুটির দিনে ধীরেসুস্থেই কাজ চলছিল মহিষাদলের লক্ষ্যা গ্রামের গুড়িয়া পরিবারে। ঘরে চলছিল টিভিটা। রাজ্য, দেশ, বিদেশে কী ঘটছে তা জানার জন্য খোলা ছিল খবরের চ্যানেল। সেভাবে মন দিয়ে খবর দেখছিলেন না কেউই। আচমকা উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের (Uttarakhand Disaster) খবরে যেন মনটা কু গেয়ে ওঠে। আর মনে আশঙ্কার মেঘ জমবে নাই বা কেন? উত্তরাখণ্ডের তপোবন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই যে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন চকদ্বাড়িবেড়িয়া গ্রামের ঘরের ছেলে সুদীপ গুড়িয়া এবং ট্যাংরাখালি গ্রামের লালু জানা, বুলা জানা-সহ চারজন। নজর রাখেন টিভির পর্দায়। তাঁরা দেখেন ধৌলিগঙ্গা, ঋষিগঙ্গা ও অলোকনন্দার জলে তছনছ হয়ে গিয়েছে সব। তপোবন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ভেসে গিয়েছে। নিখোঁজ শতাধিক কর্মী। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে চোখের কোণ ভিজে যায় পরিজনদের। মাথায় হাত পড়ে যায় প্রতিবেশীদেরও।
বিপর্যয়ের খবর পাওয়ামাত্রই সুদীপের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তাঁর পরিজন-প্রতিবেশীরা। তবে ফোনে পাওয়া যায়নি তাঁকে। ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামে ফেরার কথা ছিল সুদীপের। শনিবার রাতে পরিজনদের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। ছেলে ঘরে ফেরার আনন্দে মেতে ছিল গোটা পরিবার। আচমকা এমন ঘটনায় যেন সবই বদলে গিয়েছে। ট্যাংরাখালি গ্রামের নিখোঁজ শ্রমিক লালু জানা এবং বুলা জানার পরিবারের অবস্থাও একইরকম। দুর্ঘটনার দিন সকাল আটটার সময় বাবা ধ্রুব জানার সঙ্গে কথা হয় লালুর। তারপর দুর্ঘটনার খবর জানতে পারে জানা পরিবার। লালু ও বুলার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে বহুবার। তবে যোগাযোগ করা যায়নি। এদিকে, মহিষাদলের পাশাপাশি পুরুলিয়ার (Purulia) আড়শার দু’জন শ্রমিকও উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের পর থেকে নিখোঁজ। সুমন্ত এবং অশ্বিনী তন্তুবায় নামে ওই দুই যুবক ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করতে গিয়েছিলেন। ঘরের ছেলেদের ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটছে পরিজনদের। কারও কোনও খবর না মেলায় নাওয়া খাওয়াও যেন ভুলে গিয়েছেন পরিবারের প্রত্যেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.