সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গাছের তলাতেই টানা দশ দিন! গ্রামবাসীদের বাধায় খেজুর গাছের তলায় খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন বাংলার সাত পরিযায়ী শ্রমিক। করোনা ভীতিতে গ্রামবাসীরা তাদের ঠাঁই দেয়নি হোম কোয়ারেন্টাইনে। ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে জায়গা মেলেনি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনেও। তাই গাছের তলাতেই ‘সঙ্গনিরোধ’ হয়ে রয়েছেন সাত শ্রমিক।
রেললাইন ধরে প্রায় ৩৫ কিমি হেঁটে গত দশ দিন আগে পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের আনাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর গ্রামে ফেরেন এই সাত শ্রমিক। তাঁরা হলেন নরেশ সহিস, রাজেশ সহিস, রাজু সহিস, শিবা সহিস, ভগীরথ বাগদি, নন্দলাল বাগদি ও জীতেন মুর্মু। তাঁরা পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি ব্লকের মধুকুন্ডাতে রেলের ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করতেন। লকডাউন হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সেখানেই আটকে পড়েন। কিন্তু পরবর্তীকালে ঠিকাদার সংস্থা সেভাবে খাবার বা থাকার ব্যবস্থা না করায় তারা বাধ্য হন গ্রামে আসতে। কিন্তু বাধার মুখে পড়েন। গ্রামবাসীদের কথা মতো তাঁরা পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করান। কিন্তু তারপরেও গ্রামে ঢোকার অনুমতি দেয়নি সেখানকার বাসিন্দারা বলে অভিযোগ। তাই গাছ তলাতেই ঠাঁই।
কিন্তু প্রশ্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর বিধি অনুযায়ী প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। কিন্তু ওই শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রশাসন এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ করেনি। পাড়া ব্লকের বিডিও গৌতম মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ওরা যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়েছেন সেই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এই ব্যাপারটি পুলিশ দেখছে।” পাড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, রামপুর গ্রামে গাছ তলায় তারা কাউকে পাননি। তবুও বিষয়টি দেখা হচ্ছে। গাছ তলায় কিভাবে চলছে তাদের সংসার? ওই শ্রমিকদের পরিবারই তাঁদের খাটিয়ার বন্দোবস্ত করেছে। তাঁরাই তিন বেলা রাস্তার পাশে খাবার এনে দিচ্ছেন। সেখান থেকেই সংগ্রহ করে খিদে মেটাচ্ছেন এই শ্রমিকরা। লাগোয়া পুকুরে চলছে স্নান ও শৌচকর্ম। শ্রমিক নরেশ সহিসের কথায়, “দশ দিন আগে এসেছিলাম। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করিয়েছি। তবুও গ্রামের মানুষজন বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। তাই গাছতলাতেই আছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.